Posts

মুরসি বনাম এরদোগান

বর্তমানে ইসলামপন্থীদের মাঝে "এরদোগানীয়" রাজনীতির একটা প্রবল গ্রহণযোগ্যতা আছে। যদিও "এরদোগানীয়" রাজনীতি বলতে একেকজন একেক জিনিস বোঝেন। আমার কাছে মনে হয়েছে যে শুধু বাংলাদেশে নয় বরং মোটাদাগে উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে "এরদোগানীয়" রাজনীতির স্পষ্ট কোন ধারণা বিদ্যমান নেই। তবে যে বিষয়ে ঐক্যমত্য আছে তাহলো আধুনিক তুরস্কের রুপায়নে এরদোগানের সফলতা। ধরে নেয়া যায় যে, "এরদোগানীয়" রাজনীতি বলতে অধিকাংশ লোকই সফল হবার রাজনীতি বোঝেন। আবার অনেকের মধ্যে এই বিষয়ে বিপদজনক বিভ্রান্তি-ও বিদ্যমান। তাদের দৃষ্টিতে "এরদোগানীয়" রাজনীতির অর্থ হলো পল্টিবাজির রাজনীতি। কিংবা ধর্ম তোষণের মাধ্যমে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের রাজনীতি। অথচ একটু খোঁজ খবর করলেই এ জাতীয় রাজনীতির অসারতা ও অক্ষমতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। খোদ বাংলাদেশে-ই স্বৈরাচার লুইচ্চা সেনাপ্রধানেরা পল্টিবাজির রাজনীতি করে ধিকৃত হয়েছেন। অনেকে নির্বাচনী মৌসুমে তসবীহ জপে, মাথায় পট্টি বেঁধে জনগণ-কে ধোঁকা দিতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে জনরোষের ভয়েই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এরদোগানের সফলতার বিপরীতে উম্মতে মোহাম্মদীর মানসে আরেকটি গৎবাঁধা...

হীন জাতের উত্থান

হীন জাতদের উত্থানের প্রসঙ্গ আসলেই দেশের অভিজাত এলাকা সমূহে প্রকম্পন শুরু হয়ে যায়। কারন বাংলাদেশে এই শ্রেনীটির নির্মাণ ও সংজ্ঞায়ন হয়েছে হীনজাতদের দ্বারা। যার ফলে এই জাতীয় সংলাপ এদের জন্য এক প্রকারের অস্তিত্বের হুমকি স্বরুপ। যদি তা নাও হয় তবে নিদেনপক্ষে অস্বস্তিকর তো বটেই। এক্ষেত্রে একটা নৈতিক প্রশ্ন-ও সামনে চলে আসে। আর তা হলো, হীন জাতদের কি উত্থান ঘটতে পারেনা? তাদের কি উন্নয়নের অধিকার নেই? এটা একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারন উন্নয়ন বা তথাকথিত upward-mobility বলতে কেবলই জাগতিক উন্নয়নকে নির্দেশ করা হয়। মননের উন্নয়ন এখানে অনুপস্থিত। বরঞ্চ মানসিক উন্নয়ন যখন জাগতিক উন্নয়নের সাথে তাল দিয়ে ঘটতে পারে না তখনই সৃষ্টি হয় যাবতীয় বিপত্তির। তবে এই বিষয়ক আলাপের পূর্বে জাতের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রেও জাগতিক মাপকাঠির বিচারের পাশাপাশি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বিচারের মানদন্ডকেও স্থাপন করা জরুরী। সেই হিসাবে হীনজাত মূলত ধর্মীয় শিক্ষার অনুপস্থিতিকেই নির্দেশ করে। ধর্মীয় শিক্ষার উপস্থিতিতে তার আত্মস্থকরণের অভাবকে নির্দেশ করে। ধর্মীয় শিক্ষার পরও তার আত্মস্থকরণের অভাব ঘটবার মূলত কয়েকটি কারন। এক: দ...

শেখ মাখতুম সূত্রে

শেখ মাখতুমের ওপর বিবিসি কর্তৃক প্রকাশিত "তথ্যচিত্র"-টি আমি দেখিনি। গু-ঘাঁটাবার অভ্যাস নাই বলে আমি ঠিক প্রকৃত অর্থে একজন বাংলা হয়ে উঠতে পারিনি। তাছাড়া গাযযার গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বিবিসির মিথাচ্যার ও অপসাংবাদিকতা চর্চার বিষয়টি দিবোলোকের মতোই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলত: তাদের নির্মিত এসব "তথ্যচিত্র" প্রকাশ পেলে আমরা তখন এর পেছনে বিবিসির ধান্ধা নিয়ে চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়ি। তবে এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেলো বহু বছর আগে শেখ মাখতুমের একটি সাক্ষাৎকার। তাও খুব সম্ভবত বিবিসি এরই। সেখানে তিনি তাঁর শৈশবের স্মৃতিচারণ করেছিলেন। পিতার সাথে যখন লন্ডনে যেতেন তখন বিলাতীদের নির্মিত সভ্যতা তাঁকে মুগ্ধ করতো। তাদের সাজানো গোছানো রাস্তাঘাট, সুউচ্চ দালান, উন্নত মানের প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ব্যবহার তাঁর শৈশব মনে এতো গভীর ছাপ ফেলেছিলো যদ্দরুন আধুনিক আরব আমিরাতের সভ্যতা নির্মাণেও এর ছাপ সুস্পষ্ট। যতোদুর মনে পড়ে তিনি আরব আমিরাত-কে মানব সভ্যতার সর্বাগ্রে দেখবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। এ কারনেই মহাশূন্যে অভিযান থেকে শুরু করে সর্বাধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে আরব আমিরাতের সভ্যতা ও আত্ম-পরিচয় বিনির্মাণ...

পিআর পদ্ধতি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইন্টারনেট গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক বয়ানকে সমৃদ্ধ করবার একটা চল দেখা যাচ্ছে। যেমন বিশ্বে বর্তমানে কতো প্রকারের পিআর পদ্ধতি কোন কোন দেশে চালু আছে তার একটা আলোচনা উঠে এসেছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের গুণগত পরিবর্তনের হিসাবে এটা ভালো। আবার অন্য অর্থে এটা দেশের প্রচলিত "নোট করা" সংস্কৃতির আধুনিকায়ন মাত্র। এ দেশের মানুষদের স্কুল-কলেজ থেকেই "নোট করা" জাতীয় অপ-সংস্কৃতিতে দীক্ষিত করে তোলা হয়। এ কারনে ক্লাসের মেধাবী বলে বিবেচিত শিক্ষার্থীদের তৈরী করা নোট কে কেন্দ্র করে একটা পুরো অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। এমনকি বাংলাদেশের তথাকথিত সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েটে পর্যন্ত সিনিয়রদের "চোথা" বিকিকিনির একটা ব্যাপার চালু আছে। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গাইড বুকের সংস্কৃতি-ও এর বড়ো উদাহরণ। "নোট করা" দোষণীয় কিছু নয়। এর দোষনীয়তা এর ব্যাবহার কিংবা চর্চার ওপর নির্ভর করে। বিশ্ববিখ্যাত Schaum's কিংবা Dummies সিরিজের বইগুলো কিন্তু এক প্রকার নোট কিংবা গাইড বই-ই বটে! এমনকি হালের Cliffs Notes জাতীয় উদ্যোগ-ও এর অন্তর্ভুক্ত। বিষয়টা হলো উন্নত বিশ্বের শ...

বিভাজন যখন শক্তি

Image
বাংলাদেশের মানুষ বিভাজন চায় না। ঐক্য চায়। বর্তমানে এই ঐক্যের দুটি প্রধান চালিকা শক্তি হলো: এক) আওয়ামী, ভারতপন্থী কিংবা মুজিববাদী ফ্যাসিজমের বিরোধীতার সূত্রে ঐক্য দুই) ইসলাম পন্থীদের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে ঐক্য। মজার ব্যাপার হলো এদেশের মানুষেরা নিজেরা কিন্তু পারিবারিক কিংবা সামাজিক ক্ষেত্রে একতাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের কোর্ট-কাচারি গুলোতে পারিবারিক ও সামাজিক মামলা মোকদ্দমার বহর এই বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলে। তথাপি বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া হলো দেশে একটা রাজনৈতিক ঐক্য হোক। রাজনৈতিক দলের নেতারা বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যায়নের মতো সবাই মিলে একত্র হয়ে দাঁত কেলিয়ে এট্টু ফটুসেশন করুক। দেশে পারস্পরিক হানাহানি দুর হয়ে সম্প্রীতির সুবাতাস বইতে থাকুক - এমন কামনা মানবিক তবে বাস্তবিক নয়। আমি বরং বিষয়টাকে অন্যভাবে দেখি। ঐক্য কিংবা বিভাজন মূল কথা নয়। কথা হলো কিসের ভিত্তিতে ঐক্য বা বিভাজন হচ্ছে এবং তার প্রকৃতি-ই বা কি? অর্থাৎ যদি ধর্মদ্রোহীতার ভিত্তিতে ঐক্য হয়, যদি ছাগলামীর ভিত্তিতে ঐক্য হয় - সেই ঐক্যের আমি ঘোর বিরোধী। এর বিপরীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নিয়তে যদি বিভাজন এমনকি সংঘর্ষ-ও হয় আমার তাতেও তেমন আপত্তি নাই। বরং আমি...

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের তারুণ্য ভাবনা

 (তুরস্কের চতুর্থ যুব সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের কিয়দংশের ভিত্তিতে রচিত ভাবানুবাদ)   প্রিয় সুধী, আজকের এই তারুণ্যের সমাবেশে আমি কিছু মনখোলা আলাপচারিতা করতে চাই। আপনারা জানেন গতকাল ইস্তাম্বুল বিজয়ের ৫৭২-তম বার্ষিকী উৎযাপিত হয়েছে। আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছি সেই বীর সেনানিদের এবং ইস্তাম্বুল বিজয়ী একুশ বছর বয়সী সুলতান মেহমেদ-কে যিনি একটি নবযুগের সূচনা করেছিলেন। সুলতান মেহমেদ আমাদেরকে শুধুমাত্র ইস্তাম্বুল রক্ষারই দায়ভার দিয়ে যান নাই বরং এই বিজয়ের স্পৃহাকে লালন করবার দায়িত্বও দিয়ে গিয়েছেন। আমাদের পূর্বপুরুষদের নিকট থেকে আমরা শিখেছি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নিপীড়িতের পাশে দাঁড়াতে। আমরা শিখেছি জালিমের বিরুদ্ধে সিনা টান করে দাঁড়াতে। আমরা শিখেছি কঠিন দু:সময়ে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকতে। আমরা এমন ধর্মীয় প্রত্যয়ে দৃপ্ত এবং আত্মোৎসর্গকৃত যাকে কোন কিছু দিয়েই আটকানো যায় না। আমরা শিখেছি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে জালিমের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে ন্যায়বিচারকে সমুন্নত রাখতে। তথাপি আমাদের লড়াই কেবল মোড়লিপনা, অনধিকারচর্চা, এবং স্বেচ্ছাচারি মানসিকতার বিরুদ্ধেই ছিলোনা। বিগত পঞ্চাশ বৎসরেরও অধিক সময় যাবৎ আম...

শাতিমে রসুলের রাজনৈতিক তাৎপর্য

যেহেতু বাংলাদেশের মানুষকে সবকিছু চুকে আনগুল দিয়ে দেকিয়ে দিতে হয়, সেহেতু আমি নিশ্চিত যে পূর্বের প্রবন্ধে শাতিমে রসুলের রাজনৈতিক তাৎপর্যের ব্যাপারে স্বল্প কথায় তাৎপর্যপূর্ণ যে আলাপ তুলেছিলাম তা এই দেশের মানুষ বিশেষত বুদ্ধিবেচি মহল অন্তরঙ্গম করতে ব্যর্থ হয়েছে। শাতিমে রসুলের রাজনৈতিক তাৎপর্যের মূল সূত্র এই বুঝ ক্ষমতা যে এই লড়াই-টা রসুলে সীমাবদ্ধ নয়। তার মূল লক্ষ্য বস্তুও রসুল সা: নন। অর্থাৎ মদ প্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতা চর্চার নামে যদি মুসলমানদের আরাধ্য বিষয় সমূহের অবমাননা করতে দেয়া হয় তখন কেবল প্রতিরক্ষার সীমা-কে (defense line) পিছিয়ে আনা হয় মাত্র। অর্থাৎ অবমাননার এই আক্রমণাত্মক কৌশল শুধুমাত্র রসুল সা: কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং তা সম্প্রসারিত হয়ে মানবের আরাধ্য যে কোন বিষয় যা তাকে রক্ষণাত্মক (protective) হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করে তার সমস্ত বিষয় সমূহকেই অবমাননার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে থাকবে যতোক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ সমস্ত বিষয় সমূহে রক্ষণাত্মক হয়ে উঠবার সাহস ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যেই মূহুর্তে এই বিষয়টি ঘটে সেই মুহুর্তে তার সর্বাত্ম...