বাংলাদেশপন্থা
পূর্বে বলেছিলাম '৭১ এর পর থেকে বিশেষত বিগত মাফিয়া সরকারের আমলে কিভাবে শিকারী প্রানীর মতো বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে তাকে সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন, একঘরে করে ফেলা হয়েছিলো। এর উদ্দেশ্য ছিলো এ দেশের মানুষের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্ব কায়েম করে তাকে শোষন করা। আমাদের শোনানো হতো যে আমেরিকা "মহান" মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো। আমেরিকা খারাপ। আমাদের শোনানো হতো যে চীন '৭১ এ পাকিস্তানের পক্ষে নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিলো। তাই চীন খারাপ। এভাবে এক পর্যায়ে একমাত্র ভারত ছাড়া দুনিয়ার সবাই খারাপ হয়ে গেলো। ফলত: বাংলাদেশ ভারতের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়লো।
এখন বাংলাদেশের মানুষ উপলব্ধি করছে যে বিগত ৫৩ বৎসর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের নামে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তিস্তা সহ অনেক প্রকল্প যেগুলো বাংলাদেশের অতীব প্রয়োজনীয় সেগুলো স্রেফ ভারতের আপত্তির কারনে সফলতার মুখ দেখেনি। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতো সরকার-ই এসেছে তারা জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ রক্ষার কারনে আবার অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে তা করা হয়েছে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে পরনির্ভরশীল করে রাখবার জন্য। ভারত কেন্দ্রিক এই নির্ভরতায় পিষ্ঠ ও বয়ানে অতিষ্ঠ হয়ে জুলাই'২৪ এ দেশের আপামর জনসাধারণ বিক্ষোভ ও বিস্ফোরণে ফেটে পড়েছিলো।
এখন দেশে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব উত্তুঙ্গে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে ভারতের অবশিষ্ট বীজগুলোর অঙ্কুরোদগম অসম্ভব হয়ে পড়বে। এজন্য নতুন বীজের আমদানি হয়েছে। তার নাম বাংলাদেশপন্থা। এটা যারা করছেন তারা একেবারে ভারতের সাথে গাঁট বেধে করছেন কিনা তা বলা মুশকিল। কারন এটা একদিকে হতে পারে তাদের রাজনৈতিক হীনমন্যতার ও দেউলিয়াত্বের প্রকাশ। অন্যদিকে আমেরিকা ফার্স্টের আদলে একটা বুলি আওড়িয়ে বিশ্বমোড়লদের দৃষ্টি আকর্ষণেরও একটা সস্তা পন্থা হতে পারে।
ঘটনা যাই হোক এইপন্থা বিপদজনক ও বিভ্রান্তিকর। কেননা এর মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদের পুন:প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরী হবে। দ্বিতীয়ত আওয়ামী মাফিয়া শোষকদের যে সমাজ ও রাষ্ট্র্য বিনাশী অপরাজনীতি তারই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দেশে অনৈক্য ও বিভাজন বাড়বে। কেননা এর মধ্য দিয়ে ঈঙ্গিত করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের এক অংশ বাংলাদেশপন্থী নয়। এর সত্যতা অনস্বীকার্য। কিন্তু তা বলা হচ্ছে অসময়ে। কেননা জুলাই'২৪ এ বাংলাদেশ বিরোধী গোষ্ঠীটি লেজ গুটিয়ে ভারতে ও অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছে। দেশে অবস্থিত তাদের চেলা-চামুন্ডারাও আছে দৌড়ের ওপর। তাই বর্তমানে বাংলাদেশপন্থার আলাপ তোলাটা অবান্তর।
তথাপি যদি তুলতেই হয় সেক্ষেত্রে জনগণের সামনে এর মর্মার্থ পরিষ্কার করা উচিত। বাংলাদেশপন্থা বলে আসলে কি বোঝানো হচ্ছে? এটা বলতে কি আওয়ামীলীগের মতো সমগ্র বিশ্ব বিশেষত উম্মতে মোহাম্মদী থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবার আত্মঘাতী পন্থাকেই বোঝানো হচ্ছে? যদি তা না হয় তাহলে তাদের প্রশ্নের বিপরীতে আমরাও তো পাল্টা এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পারি যে তারা বাংলাদেশপন্থী না উম্মতপন্থী? উম্মতপন্থী হলে সে "উম্মত"-এর ভেতর কি পাকিস্তান নেই? অর্থাৎ পাকিস্তান ছাড়া উম্মতপন্থা দুরে থাক বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হবার, তাতে অংশগ্রহণ করবার সূত্রটা কি?
অর্থাৎ আওয়ামীলীগের "বড়ো ভাই" ছিলো পার্শ্ববর্তী দেশের দাদারা। কিন্তু বাংলাদেশপন্থীদের বড়ো ভাই কারা? নাকি ওনারা নিজেরাই বড়ো ভাই? আশোলে তুরষ্কের কুরুলুস ওসমান আছে তো কি হয়েছে? আমাদের আছে ভুঁড়ি loose বোরহান। আমরা একাই একশো।
অনীল কাপুর অভিনীত বলিউডের 'নায়াক' সিনেমার কথা মনে আছে? ফকিন্নীর পোলার upward-mobility ঘটে সরকারের মন্ত্রী হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার অবিরাম ঢিশুম-ঢিশুম। স্কুলে ম্যারা ইভ টিজিং এর শিকার হচ্ছে? নো টেনশন! মন্ত্রী মহোদয় কইত্থেকে উইড়া আইসা শুরা কইরা দিছে ঢিশুম-ঢিশুম। সরকারী অফিসে নিরীহ নাগরিক-কে ঘুষ আদায়ের জন্য নিপীড়ন করা হচ্ছে? নো টেনশন! এই নেন মন্ত্রী মহোদয়ের ঢিশুম-ঢিশুম। রাজনৈতিক গুন্ডা পাড়ায় মাস্তানী করতে আসছে? ... আবারও বলতে হবে? ঢিশুম-ঢিশুম! দি ম্যাট্রিক্স স্টাইলের মারামারি ১০০ গুণ বাড়িয়ে ভারতীয় বস্তিরুচির দর্শকদের মন মাতানো গেলেও তা অবাস্তবই থাকে।
তথাপি বাংলাদেশে মনে মনে মন ক্যালা খাওয়ার লোকের অভাব নাই। সেরকম রাজনীতিবিদদেরও অভাব নাই। এজন্যই বিগত ৫৩ দশকের পথচলায় আজ এই রাষ্ট্র্যের এরকম দুর্দশা। তো কি আর করা? বাংলাদেশপন্থা করুন। আর ভুঁড়ি টাইট করে, ক্যালা হাতে নিয়ে বুরাক অসচিভিতের মতো ঢঙ করে বলুন:
ভুঁড়িটা বেনিম, ক্যালাটা বেনিম। (ভুঁড়িও আমার, কলাও আমার)
আমরাও ছাগলের মতো দোয়া করি, আল্লা রাজী ওলসুন। কোরবান ভ্যাঁ!