ধর্মহীন রাজনীতির কপটতা

কিছু দিন পূর্বে যখন বিএনপির নেতৃস্থানীয় পর্যায় থেকে ধর্মহীন রাজনীতি চর্চার সূত্রে পাশ্চাত্য কেন্দ্রিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার অংশ হিসেবে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন, ক্যারিকেচার আঁকার অপসংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা হয়েছিলো তখন আমরা এর বিরোধীতা করেছিলাম। কারন এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোন দ্বিধা ছিলোনা যে এটা প্রথমত মানব স্বভাব বিরোধী দ্বিতীয়ত এটা একটা অসাধু প্রয়াস। অর্থাৎ প্রথমত, যে আদম সন্তান নিজের সমালোচনা এমনকি মামুলী, দৈনিক, ও স্বাভাবিক বিষয় সমূহে পর্যন্ত প্রত্যাখান (rejection) ও মতের অমিল-কে সহজ ভাবে নিতে পারে না সেখানে সে কি করে তাকে লক্ষ্য করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ মেনে নেবে? দ্বিতীয়ত যারা রাজনীতি-তে এই ব্যঙ্গ বিদ্রুপের অপসংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে চেয়েছেন তারা তা চেয়েছেন মূলত বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে চাওয়ার নিয়তে। এটা কপটতার চূড়ান্ত।

এর সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ আমরা প্রত্যক্ষ করলাম বিএনপির অঙ্গসংগঠন সমূহের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে প্রস্তর নিক্ষেপে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ উত্তর ঘটনাবলীতে। মিডিয়াতে হত্যাযজ্ঞকে গৌন করে হত্যাযজ্ঞের বিরোধীতায় গড়ে ওঠা প্রতিবাদের ধরণ ও ভাষাকে আলোচনার মুখ্য বিষয়ে পরিণত করা হলো। মনে হয় হত্যাযজ্ঞ নয় বরং তার প্রেক্ষিতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিবর্গের প্রতিবাদের ভাষায় ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে পূর্বের মাফিয়া শাসনের ধারাবাহিকতায় মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে হুমকি-ধমকি পর্যন্ত প্রদর্শন করা হলো। এমনকি জুলাই পরবর্তী 'নতুন মানুষের' বয়ান বেচা বানলার মেডিওকার নিৎশে-টা পর্যন্ত আওমীদের পাতা ফাঁদে পড়ে বলেছে, 'This will be remembered'! অর্থাৎ মহানায়ক ডিপজলের ভাষায়:

ত-রে আমি আইযগা খায়া ফালাম্যূ-।

অথচ এই অ-ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটি-ই ধর্ম অবমাননার সময় আমাদের পরমতসহিষ্ণুতার সবক দেয়। ধর্মীয় বিষয় সমূহে আমরা যেনো সংবেদনশীলতা পরিহার করে নির্জীব হয়ে থাকি সেই কুমন্ত্রণা দান করে। আশোলে পোততেকের মদ পোকাশের শাদিনতা আচে। সহিংসতা ককোনোই কাম্য নয়। ইত্যাদি। ইত্যাদি। কিন্তু অবমাননার সেই রেশ তাদের পূজনীয় ব্যক্তি কিংবা চেতনা-কে আঘাত করা মাত্রই তারা জিঘাংসা চরিতার্থে মত্ত হয়ে ওঠে। মত প্রকাশের সেই স্বাধীনতা যখন তাদের দূর্গে কুঠারাঘাত করে তখন তারা হয়ে ওঠে প্রতিশোধপরায়ণ। ব্যাপার-টা যেনো এমন যে বিরোধীতা করতে হবে তাদের বাতলে দেয়া ব্যাকরণ অনুসারে। দাঁড়ি, কমা মেনে। যাতে মোটের ওপর তারাই এর ফায়দা তুলতে পারে। এর বিপরীত হলেই তা অগ্রহণযোগ্য।

এই দ্বিচারিতা, কপটতার মূলে নিহিত হলো গায়রে ইসলামী বিশ্বাস কাঠামো ও কর্মপদ্ধতি। এই বিশ্বাস ভ্রান্ত। এই কর্ম-পদ্ধতি অকেজো। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলি-ই তার উপযুক্ত প্রমাণ।

কতই না ভালো হতো যদি এইসব লোকেরা গায়রে ইসলামের বিভ্রান্তি-তে পতিত না হয়ে পরিপূর্ণরুপে ইসলামে দাখিল হয়ে যেতো। তাহলে বিদেশী, বিধর্মীদের ডেকে এনে, তাদের উপস্থিতিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে নিজেদের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কণের প্রতি উদারতার ভণিতা প্রদর্শনের মাধ্যমে যে ঐ ব্যক্তিবিশেষ নিজেদের ও তাদের জাতির অবমাননা করেছেন তা থেকে নিস্তার পাওয়া যেতো।

এর বিপরীতে পাশ্চাত্যের অনুকরণে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে সমাজে চোগলখুরি ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে ফাসাদের ব্যাপ্তি ছড়ানোর ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মাধ্যমে সামাজিক সৌহার্দ্র ও সম্প্রীতি বিনষ্টের সুস্পষ্ট বিরোধীতা করে একে প্রতিহতের জন্য আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেয়া উচিত ছিলো। সেই সাথে এও উল্লেখ করা উচিত ছিলো যে ইসলাম মানুষকে মানুষের প্রতি রহমদিল ও ক্ষমাশীল হবার উৎসাহ দেয়। বিশেষ করে শাসক-কে শাসিতের প্রতি। এতোটাই যে এটা দ্বিতীয় খলিফা উমার রা: এঁর অগস্ত্য যাত্রাকালে প্রদানকৃত উপদেশ সমূহের একটি। তথাপি সুনির্দিষ্ট অপরাধের শাস্তি বিধানে তাকে বাধা প্রদান বা দোষী করে না। এর ফল এই যে, শাসক বর্গ গালিগালাজ খেয়ে জনসাধারনের ওপর ক্ষিপ্ত না হয়ে বরং তাদের সংক্ষুব্ধ হওয়া নিয়ে পেরেশান হয়ে থাকেন এবং এর কারন অনুসন্ধানে সচেষ্ট হয়ে তার সমাধানে ব্যাপৃত হন। একই সাথে সমাজ ও রাষ্ট্র্যের ক্ষতিকল্পে যখন সুপরিকল্পিত ভাবে বিভেদ ও ঘৃণা ছড়ানো হয় তাদের চিহ্নিত করে উল্লেখিত আইনের আওতায় দেশ, সমাজ, ও রাষ্ট্র্য রক্ষাকল্পে তাদের বিচার করেন। কেবল মাত্র এভাবেই সমাজে ও রাষ্ট্র্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসতে পারে।

Popular posts from this blog

জুলাই কাহা-নি

অত্রাঞ্চলে আমি-ই রাষ্ট্র্য, আমি-ই তার পতি

The Case for Rohingyas