নারীর ক্ষমতায়ন ও ইসলাম

সম্প্রতি পাশ্চাত্যিয় কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নারী নেত্রীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছেন। এ বিষয়-টা আমি সহজভাবে নিতে পারছি না। যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত নারী-বিদ্বেষের হিন্দুয়ানী অপসংস্কৃতি চর্চার অপনোদনে নারীদের ক্ষমতায়নের ব্যাপারে আমি লিখেছি। এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।

সংক্ষেপে কথা এই যে, মুসলিম নারীদের ক্ষমতায়ন কিংবা মুসলিম সমাজে নারীদের পশ্চাদপদতা অথবা নারী বিদ্বেষ জণিত সমস্যা সমূহের সমাধান হতে হবে স্বত:স্ফূর্ত। আরোপিত নয়। যখন তা স্বত:স্ফূর্ত হবে তখন তা হবে ইসলাম দ্বারা অনুপ্রাণিত। ইসলামী কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলামী তাহজীব-তমদ্দুনের আত্মশুদ্ধির আভ্যন্তরীণ শক্তি থেকে উৎসারিত। কিন্তু যখনই তা আরোপিত হবে তখন তা বিকৃতি, বিভেদ, বিভ্রান্তি-ই বয়ে আনবে কেবল। বিশেষ করে যখন কোরআন আমােদের সতর্ক করছে যে কাফের-মুশরিকগণ কখনোই ক্ষান্ত হবে না যাবৎ তারা মুসলমানদের তাদেরই মতো পথচ্যুত করতে সমর্থ হয়।

সেই প্রেক্ষিতে, আমরা স্মরণ করছি যখন কিছুদিন আগে পাশ্চাত্যীয় কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকের ব্রিফিং এর ব্যাপারে জানাতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো যে নারীদের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় এবং তাদের দলীয় ডেলিগেশনে নারীদের অনুপস্থিতির বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

যদি তার প্রেক্ষিতে-ই এই পরিবর্তন হয়ে থাকে তাহলে তা অপমানজনক। পরাজিত মানসিকতার বহি:প্রকাশ। যদিও বাংলা-তে বলে গরীবের বউ সবার ভাবী। এটা শুধু বাংলাদেশ নয় বরং সমস্ত মুসলিম দেশে সমূহের পরাজিত মানসিকতা ও কাফির প্রতি অধীনতার-ই লক্ষণবিশেষ। এ কারনেই আমরা দেখি যে তওহীদ করে ফাটিয়ে ফেলা ছৈদি রাজ-পরিবারের নারীরাও হিজাব ছেড়ে কাফির-মুশরিকদের বৈঠকখানায় শামিল হতে উন্মুখ। এটা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।

আমি শৈশবে একটা হাদীস পড়েছিলাম যেখানে উমার রা: একজন দাসী-কে মাথায় কাপড় দেবার জন্য ভর্ৎসনা করেছিলেন এবং তার মাথার কাপড় সরিয়ে নেবার নির্দেশ দেন। দেশের সেকুলার শিক্ষার বদৌলতে আমার অপরিপক্ক মানস স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি ভালো ভাবে নেয়নি। বরং জগতের প্রতিটি নারীকে হৈমন্তীর মতো সরল-নিষ্পাপ গণ্য করে ঠাকুরীয় ভাবাবেগে ভেসে গিয়ে, 'চকের পানি দরে রাকতে ফারলাম না। সেরে দিলাম' - এর মতো অবস্থা হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের ঠাকুরপো এসব গল্প ফাঁদলে কি হবে, প্রেমের ভান করে পেট বানাতে এবং এরপর দারোগাদের ঘুষ দিয়ে পেট নামাতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। বান-গালির গৌরব। উই আর ভেরী পাউড ছার।

সুতরাং এ বিষয়ক শরহে হাদীস জানা না থাকলেও, "ধারণা" করতে পারি যে হয়ত উমার রা: ঐ নারী থেকে প্রতারণার আশংকা করেই তাকে এই ভর্ৎসনা করেছিলেন। কেননা তৎকালীনকার সমাজ কাঠামোয়, এমনকি ইসলাম পূর্ব যুগে এবং অন্যত্র অনারব সমাজেও, মাথায় কাপড় দেয়া উচ্চবংশীয় স্বাধীন নারীর প্রতীক ছিলো। আর এই সূত্রেই এই হাদীসের প্রসঙ্গ টানা।

অথচ শত বৎসরের উপনিবেশবাদের ফলে অবস্থা এখন এই দাঁড়িয়েছে যে মুসলিম পরিবারের নারীরা মাথায় কাপড় না দেয়া, মুখ না ঢাকার মধ্যেই এক ধরনের ক্ষমতায়ন অনুভব করেন! সুবহান আল্লাহ! এর বিপরীতে যে কাফিররা বছরের পর বছর ধরে হত্যাযজ্ঞ, নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ, অপমান-অপদস্তকরন, হীনমন্যকরন - এর মাধ্যমে মুসলিমদেরকে ধর্মহীনতায় অভ্যস্ত করে তুলেছে তাদের নারীরা এখনও বিয়ে-শাদী, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, এমনকি অনেক সময় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনেও মাথা এবং মুখ ঢেকে রাখে। তবে হ্যাঁ রেনেসাঁ উত্তর ধর্মদ্রোহীতার ব্যাপ্তিতে তাদের এই আয়োজন 'পোন ল্যাঙ্গটা, মুখে ঘোমটা'-এর মতো হয়ে যায় বৈকি!




 
আর এখানেই আমাদের আপত্তিটা। যদিও বাস্তবার নিরীখে এই আপত্তি উত্থাপনের জায়গায় মুসলমানরা এখনও আসতে পারেনি। আমাদের রাষ্ট্রসমূহ সেই পর্যায়ে সার্বভৌমত্ব প্রয়োগের শক্তি অর্জন করতে পারেনি। আর তা পারেনি বলেই আমরা পাল্টা পাশ্চাত্যিয়দের জিজ্ঞেস করতে পারি না যে পর্দানশীন নারীদের ব্যাপারে তাদের মনোভাব কি? তাদের সমাজ ও রাষ্ট্র্য থেকে ইসলামভীতি দুর করবার জন্য তারা ঠিক কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে? তারা মুসলমান দেশসূমহে যেসব ডেলিগেশন পাঠায় সেখানে পর্দানশীন নারী, 'আ-লিমা, শেইখাদের দেখা যায় না কেন?

Popular posts from this blog

জুলাই কাহা-নি

অত্রাঞ্চলে আমি-ই রাষ্ট্র্য, আমি-ই তার পতি

The Case for Rohingyas