পাকিস্তানপন্থা

ব্যাপারটা এমন নয় যে আমরা ধর্মদ্রোহী বামবাদী কিংবা ধর্ম ব্যবসায়ী আওমী পরিবারে জন্মে বিগত মাফিয়া শাসনে হঠাৎ দ্বীনে ফিরে এসে ছালাফিগিরি, জিহাদিগিরি, মাছনা-ছুলাছাগিরি কিংবা ইসলামী ব্যাংকিং এর বেকুবি সমালোচনার আড়ালে জামায়াতে ইসলামীর সূত্রে খোদ ইসলামপন্থি রাজনীতির-ই বিরোধীতা করার মাধ্যমে তাগুতি-কুফরি অক্ষশক্তির একজন ঘেঁটুপুত্র হিসেবে মুরগীদের নিকট বিরাট হাফিজাহুল্লাহ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছি।

ব্যাপার-টা এমনও নয় যে ফুলার রোডের উচ্চ ডিগ্রীধারী বেকুব কিংবা পলাশী পট্টির চোথা-মারানি হাই-আইকিউ কামলাদের পাল্লায় পড়ে উপনিবেশবাদের পরাজিত চিন্তা কাঠামোকে উচ্চশিক্ষার নামে গলাধ:করণ করে এছলাম, দেহতত্ত্ববাদ, লালন ফকির, ছোছালিজম, লিবাড়েলিজম - ইত্যাদি বিচিত্র সব "জম" এর ঘুঁটা দিয়ে তৈরী এক গেলাস গাঁঞ্জুটি সেবন করে আমাদের দায় ও দরদের মজমা জমাইতে হবে।

কিংবা পাকিস্তান সরকারের বেতন ও সুবিধাভোগী আপিসার-হাবিলদার, আমলা-কামলা থেকে দৈবদুর্বিপাকে পড়ে রাতারাতি দেশ, বাহিনী ইত্যাকার নানা-পতি হয়ে ভক করে এক কিদ্ভুদকিমাকার রাজনীতি পয়দা করতে বাধ্য হয়েছি - ঘটনা তেমনও নয়।

অথবা ইস্লাঁ-মি পরিবেশে বড়ো হয়ে মনের বক্রতায় কিংবা খাসলতের দায়ে ইসলামের খোলসে তাগুতি ও কুফরি বয়ান রটানোর মতো গাড়োল-ও আমরা নই। অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামের উদরে পয়দা হয়ে এর চিন্তাধারা, কর্মপদ্ধতি, ও মর্মবাণী উপলব্ধি না করেই এছলামপন্থী রাজনীতি করতে গিয়ে নিজেদের অকালে গর্ভপাতের ফসল হিসেবে তুলে ধরবার বেইজ্জতিতেও আমাদের পড়তে হয়নি। আল-হামদুলিল্লাহ।

মহান আল্লাহর অপার কৃপায় আমাদের সিলসিলা বহু পুরোনো। এর শেকড় অনেক গভীরে। ঠিক যেমন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি বিংশ শতকের কোন আকস্মিক উদ্ভাবন নয়। বরং চৌদ্দশত বৎছর ধরে উম্মতে মোহাম্মদীর দ্বীন ও দুনিয়া সম্পর্কিত বোঝাপড়ার সর্বাধুনিক প্রবাহ মাত্র।

আমরা সেই সময় পার করে এসেছি যখন শ্যামলী নাসরিন ও এডলিন মালাকার সহ মুসলিম বিদ্বেষীদের পরিচালনায় ঢাকার নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে মুসলিম অভিভাবকদের ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে স্কুলে পৌছাতে ক্ষণিকের বিলম্ব হওয়া মাত্রই নিজ সন্তানদের বহিষ্কারাদেশের হুমকি শুনতে হতো প্রায়শ। কিংবা ইউল্যাবের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধার স্বীকৃতি স্বরুপ আই-আর থেকে যখন রামায়ন-মহাভারতের কল্প-কাহিনী ও নেংটা ছবি সম্বলিত কেতাব উপহার দেয়া হতো তখন আমাদের পূর্ব-পুরুষদের নিরব গযবের দৃষ্টি থেকে আমরা ইসলাম ও কুফরের লড়াইয়ের গভীরতা আঁচ করতে শিখেছি।

শিখেছি বলেই আমাদের মুখ দিয়ে "তুমি কে? আমি কে?" স্লোগান বের হয়নি। এবং বের হবার পর ফ্যাসিবাদের হুমকিতে ও তার মিডিয়ার পাল্লায় পড়ে নেজ গুটিয়ে স্বৈরাচারের ওপর তার দায় চাপানোর প্রয়াস চালাতে হয়নি। চব্বিশের জুলাই-তে আমাদের প্রোফাইল-ও আদমখেকো বামবাদীদের প্রিয় রক্তবর্ণ ধারণ করেনি। কারন চলমান ঘটনাবলীর নিগুঢ় তত্ত্ব ইসলামের সূত্রে, ঈমানের সূত্রে আমাদের নিকট ধরা দেয়। দেয় বলেই আমাদের পূর্ব-পুরুষগণ একাত্তুরের ডিসেম্বরের পর অশ্রু বিসর্জন দিয়ে তাঁদের চক্ষুযুগলকে ক্লান্ত করেছিলেন, কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলেন এই আশংকায় যে অত:পর এই দেশে আর ঈমান-আমল নিয়ে বসবাস করা যাবে না।

সুতরাং যখন উপনিবেশবাদীদের রাজধানী থেকে "দিল্লী নয়, পিন্ডি নয়" - শ্লোগান ভেসে আসে তখন তার মূল প্রপঞ্চকদের আমরা ঠাহর করতে পারি। কিংবা মিডিয়া উপস্থাপকদের কারা আগ বাড়িয়ে ইসলামপন্থীদের জেরা করে আর কাদের টেলিপ্রম্পটের মাধ্যমে পর্দার আড়াল থেকে ওয়াসওয়াসা দেয়া হয় আমরা তার খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করি। অথবা জুলাইয়ের বন্দোবস্তের জায়গীরদারেরা যখন ইসলামের শত্রুপক্ষের সাথে মিশে পাকিস্তানপন্থার পুরানা আলাপ টানে তার অসারতা ও ছ্যাবলামি ধরতেও আমাদের বেগ পেতে হয়না।

একারনেই আমাদের পূর্ব-পুরুষদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সিলসিলা হলো গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসানো। তাই মরা মাছের মতো স্রোতের টানে ভেসে চলা আমাদের কাজ নয়। বরং আমাদের গন্তব্য যদি হয় ভিন্ন তবে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে চলাই আমাদের কর্তব্য।

সেই কর্তব্য থেকে আমরা পাল্টা শুধোতে চাই যে বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পাকিস্তান পন্থা চলবে না তো কোন পন্থা চলবে? বরং আমরা আগ বাড়িয়ে এও বলতে চাই যে শুধু বাংলাদেশী মুসলমানদের পাকিস্তানপন্থা করে লাভ নাই। যদি না পাকিস্তানের মুসলমানেরাও বাংলাদেশপন্থা করেন। আর তার আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি। আল-হামদুলিল্লাহ। এবং শুধু বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মুসলমানদের পারস্পরিক পন্থাগিরীতে লাভ নাই যদি না আরবের, আজমের সকল মুসলমান সম্মিলিত ভাবে একে অপরের পন্থাগিরী করে। অর্থাৎ হাদিসের উপদেশ অনুযায়ী যতোক্ষণ পর্যন্ত না নানা ধরনের মুসলিম জাতিগোষ্ঠী সমূহ একে অপরের জন্য তা-ই চাচ্ছে যা তারা নিজেদের জন্য চাচ্ছে ততোক্ষণ পর্যন্ত উম্মতে মোহাম্মদীর উত্তরণ ঘটা সম্ভব নয়। এই উপলব্ধির বিকাশও আমরা আরবী-আজমীদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। সিরিয়ানদের অনেকেই এখন প্রকাশ্যে তাঁদের পূর্ব-পুরুষদের পক্ষ থেকে উসমানীয় শাসনের বিরুদ্বে কৃত বিদ্রোহের জন্য আফসোস করতে দেখা যাচ্ছে।

আর যখনই উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে ঐক্যের, মেলবন্ধনের, একে অপরের কল্যাণ কামনার চল শুরু হয়ে যাবে তখনই নিজেদের ভেতরে থাকা উপনিবেশবাদী চ্যালা-চামুন্ডাদের ছটফটানি স্পষ্ট হয়ে যাবে। যারা এই উপমাহদেশের মুসলমানদের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ-পাকিস্তান বিভেদ জিইয়ে রেখেছে, তারাই মধ্যপ্রাচ্যে আরব, কুর্দী, ও তুর্কীদের মধ্যে বিবাদ জিইয়ে রাখতে চাচ্ছে। যারা আমাদের প্রতি মূহুর্তে পাকিস্তানী বর্বরতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, তারাই পাকিস্তানীদেরকে বাঙ্গালী কর্তৃক বিশ্বাসঘাতকতা ও বিহারী নিধন যজ্ঞের সবক দেয়। তারাই আরবীদের উসমানীয় সাম্রাজ্যের সময় তুর্কি শোষণ ও তুর্কিদের লরেন্স অব এরাবিয়ার বিশ্বাসঘাতকতার বয়ান চালু রাখে।

অথছ ইসলামের ইতিহাস এমন আজব ইতিহাস যে মৃত্যুশয্যায় দ্বিতীয় খলিফা ওমরা রা: বলেছিলেন যে, যদি সালিম জীবিত থাকিতেন তবে আমি তাঁহাকে-ই খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করিতাম! এই সালিম মওলা রা: ছিলেন আবু হুদাইফা রা: এর দাস! যাকে তিনি পরবর্তীতে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তদ্রুপ আমরা দেখতে পাই আরবে তুর্কীদের শাসন, উসমানী শাসন ব্যবস্থায় আরবী, আজমীদের বর্ণাঢ্য উপস্থিতি। আর উপমহাদেশের ঘটনা তো আপনাদের নখ-দপর্নে। হেনো নৃতাত্ত্বিক শাসক নাই যা এই উপহমহাদেশ প্রত্যক্ষ করে নাই। যদিও এখানে আমরা পরিপূর্ণ রুপে ইসলামী শাসন পাই নাই তথাপি তা মোটাদাগে ইসলামী শিক্ষায় উজ্জীবিত শাসন ব্যবস্থা ছিলো। আর এ কারনেই মানুষের জন্ম, বংশ ইত্যাদি যেসব কাঠামোর ভিত্তিতে অন্যায্যভাবে যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষদের দমিয়ে রাখা হতো সেই সব কাঠামোর উপস্থিতি আমরা বিশ্ব জুড়ে মুসলিম শাসন ব্যবস্থাতে লক্ষ্য করি নাই। করি নাই বলেই বিশ্ব জুড়ে মুসলিম শাসন সকল বর্ণ এমনকি ধর্মের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিলো। এটাই পাকিস্তান পন্থার মূল উপজীব্য।

Popular posts from this blog

জুলাই কাহা-নি

অত্রাঞ্চলে আমি-ই রাষ্ট্র্য, আমি-ই তার পতি

The Case for Rohingyas