গোয়েবলস সূত্রে

ইরানের এক্টিভিস্টদের কায়দা কানুন "দৈনিক ইনকিলাব" পত্রিকার মতো। অর্থাৎ এরা হলো ইসলামী গোয়েবলস। যদি কিছু ঘটে সেটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করে। যদি কিছু না-ও ঘটে তাহলে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী কল্পনার আশ্রয় নিয়ে নিজ থেকে বানিয়ে বানিয়ে খবর প্রচার করে "তৌহিদী জনতার" আবেগ কিংবা বেকুবিকে পুঁজি করে নিজেদের পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর জন্য। এ কারনে এদের ঠিক কোন খবরটা সত্য, কোনটা অতিরঞ্জিত, কোনটা একেবারে বানোয়াট এটা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়। বিশেষ করে যারা সাধারন পাঠক তাদের জন্য। কারন সব খবর যাচাই বাছাই করাতো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের সে সময়ও নেই, রিসোর্সও নেই। তাই একসময় দেখা যায় খবরের ব্যাপারে পাঠকের বিশ্বাস উঠে যায়।

ঠিক এই বিষয় টা আমরা লক্ষ্য করেছি খোদ যুক্তরাষ্ট্র্যে। ট্রাম্পের যে উত্থান এটা যতোটা না তার প্রতি মানুষের আস্থা থেকে তার চাইতে বেশী ডিপ স্টেট এবং প্রচলিত মিডিয়াগুলোর ওপর অনাস্থা থেকে। ৭ অক্টোবরের পর ইরানের সব চাইতে বড়ো যে ক্ষতিটা হয়েছে তা হলো সে তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। রাজনৈতিক কিংবা সমরতান্ত্রিক বাগাড়ম্বর ময়দানে লড়াইয়ের একটা মোক্ষম অস্ত্র। কিন্তু যুদ্ধাস্ত্রের মতোই এর যথেচ্ছ ব্যবহার হিতে বিপরীত ঘটাতে পারে।

আইসিসের একটা বিশেষ অর্জন ছিলো যে তার শত্রু পক্ষ তার প্রচারিত খবর সমূহে বিশ্বাস করতো। কারন সংকটপূর্ণ এলাকায় বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া ছিলো দূরুহ। কিন্তু দেখা যেতো আইসিস যে হতাহতের খবর প্রচার করছে তা অধিকাংশ সময়েই পুরোপুরি মিল যেতো। এ কারনে পরবর্তীতে তাদের শত্রুরা তাদের প্রচারিত খবরের ভিত্তিতেই পরিস্থিতি যাচাই করতো। কিন্তু ইরান একবার মিসাইল ছুঁড়লে তার এক্টিভিস্টরা সোশাল মিডিয়াগুলোতে ভুয়া-বানোয়াট খবরে ভাসিয়ে দেয়। মনে হয় যেনো নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প কিছুক্ষণ পর খামেনীর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করার বায়াত নিবে - এরকম অবস্থা।

বাংলাদেশে বিডিআরের সাথে বিএসফের যে উল্লেখযোগ্য দু-এক বার সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে সে সময়ও ইনকিলাব পত্রিকা এরকম বানোয়াট অতিরঞ্জিত খবর ছেপেছিলো। বিশেষ করে নব্বই দশকের শেষের দিকে আওমী আমলে যে সংঘর্ষটা হয় তখন ইনকিলাব পত্রিকা এমন ভাবে খবর ছেপেছিলো যে তৌহিদী জনতা উত্তেজনা ধরে রাখতে পারছিলো না। বার বার হিশু করে দিচ্ছিলো। আল্লাহ সিজি করসুন, কোরবান বেই!

আমার মনে পড়ে সেই সময় চকবাজার জামে মসজিদের প্রবীণ খতিব সাহেবের কাছে দোয়া নিতে গিয়েছিলাম আমার বাবার সাথে। ওনার লম্বা করে সেজদায় গিয়ে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকার দৃশ্য আমার বাল্যমনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিলো। কবে যেনো টুইটারে সম্ভবত তুর্কী বা আরবী একজন আলেম বলছিলেন যে মুসলমানরা প্রায়শ বদ নজরের কথা বলে। কিন্তু নেক নজরের কথা কেউ বলেনা। অথচ বদ নজরের মতো নেক নজরও সত্য। একজন আল্লাহ ভক্ত মু্'মিনের এক নজরে বহু মানুষের জীবন পাল্টে যাবার ঘটনা ইসলামী লোককাহিনী সমূহে ভরপুর। এটাই নেককার লোকদের সোহবতের মাহাত্ম।

তো আমরা কথা বলার সময় ইনকিলাব পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট খতিব মুহতারামের এক তালেব এসেছিলো একটা খবরের বিষয়ে ওনার পরামর্শ নেবার জন্য। সে সময়ে জাতীয় পর্যায়ে কি একটা ইস্যু চলছিলো। আলাপের এক পর্যায়ে খতিব সাহেব স্মৃতিচারণ করলেন যে ওনার এক পরিচিত লোককে, তালেব না আত্মীয় ঠিক স্মরণে নেই, মুক্তিরা বহু নির্যাতনের পর গাড়ীর পেছনে বেঁধে মাইল খানেক টানা-হেঁচড়া করানোর পরও তার মুখ দিয়ে "জয় বাংলা" বলাতে পারেনি।

অথচ বিগত আওমী সময়ে এই কওমীরা পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বনে গেলো। ওরে কি মুক্তিযুদ্ধ প্রেম! ওরে কি পাকিস্তান বিদ্বেষ। উরি বাবা! উরি বাবা, উরি বাবা, রাসনা! এমনকি ইনকিলাব পত্রিকাও ভোল পাল্টে আওমী দালাল বনে গেলো। এভাবে চীন পন্থী যেসব কমুনিস্টগুলো মুক্তিযুদ্ধকে কুত্তার কামড়াকামড়ি বলেছিলো তাদের পল্টি নেয়া, হুজুরসহ পাকিস্তান সরকার ও মিলিটারী থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক, আমলা ও সমাজের নানা স্তরের লোকদের পল্টি নেয়ার পর জামাতের লোকেরা হয়ে পড়লো একঘরে। সব দোষ তাদের।

কওমীদের কাছে তারা তো আগেও এছলামি দল ছিলো না। আকিদায় সমস্যা। এট্টু প্রবলেম। কওমীদের পীরের বেয়াইরা শাহবাগে গিয়ে আঁ হযরতের অপমানকারীর জানাজা পড়লে সমস্যা নাই। বরং তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গেলে পীর সাপ চোখ উপড়ে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে রেখেছে। এরা ক্ষমতার আসলে যে শরীয়ত বাস্তবায়ন করবে তার ক্ষতি থেকে যেনো মহান আল্লাহ নিরীহ মোমেন ও মোমেনাদের হেফাজত করেন।

তবে দোষ জামায়াতে ইসলামীর। কারন তারা "লিবারেল"। যদিও পাশ্চাত্যের অর্থে নয়। বরং এই অর্থে যে তারা মুসলমানদের আত্ম-সংশোধনের সুযোগ ও সময় দিতে চায়। জনগণের আধ্যাত্মিক মানোন্নয়নের দীর্ঘ পথ তারা ধৈর্য্যের সাথে পাড়ি দিতে চায়। অর্থাৎ বেতালে এলেমদের মতো রাস্তাঘাটে মানুষদের পিটিয়ে পাচা লাল করে দেয়ার পক্ষপাতি তারা নয়। এটাই সমস্যা।

সমস্যা শুধু নাই ধর্মের জায়গীর নেয়া কওমীদের। বিশেষত আওমী ঘরানার হুজুরদের। সমস্যা নাই হযরত গোয়েবলস হাফি: এর একনিষ্ঠ মুরীদ ইনকিলাব পত্রিকার। মনে পড়ে উদয়ন স্কুলের শিক্ষিকা ধর্মান্তরিত "মুসলিম" শ্যামলী নাসরিন একাত্তুরে তার স্বামীর হত্যাকান্ডে ইনকিলাবের বাহাউদ্দিন না মাওলানা মান্নান কাকে যেনো সবসময় অভিযুক্ত করতো। যদিও আওমী ট্রাইবুনালে গিয়ে তার বহুদিনের সাক্ষ্য পরিবর্তন করে এর দায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ওপর দিয়ে দেয়। এভাবেই জামায়াত হয়ে যায় "যুদ্ধাপরাধীর" দল। আর ইনকিলাব হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের পত্রিকা। এভাবেই জামায়াত কখনোই কওমী মানদন্ডে ইসলামী দল হয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু শেখ হাসিনা বনে যায় কওমী জননি। কারন এটা বাংলাদেশ। এটা বাংলাদের দেশ। এটা বাংলাদেরই দেশ। মহান আল্লাহ যেনো মোমেন-মোমেনা দের এই পরীক্ষা উৎরে যাবার তওফিক দেন।

Popular posts from this blog

আসেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাজাই

ইসলাম ও গণতন্ত্র

জামাতের ভোট: একবারে না পারিলে দাও শতবার