ভাতৃসংঘ থেকে আল-শারা: কিভাবে?
১। প্রাবন্ধিকের মতে সিরিয়ান ভাতৃসংঘ উম্মাহ কেন্দ্রিক ইসলামী জাতিয়তাবাদের বদলে আরব জাতিয়তাবাদের পক্ষপাতদুষ্ট ছিলো। এটাই তার প্রবন্ধের মূল প্রস্তাবনা। বলা বাহুল্য এই প্রস্তাবনা অত্যন্ত ঠুনকো ও অসঙ্গত।
২। হিজবুত তাহেরীদের লিফলেট চালাচালির জিহাদ সিরিয়াতেও চালু ছিলো। অন্যান্য জায়গার মতো সেখানে তাদের এই প্রকল্প মারা খেয়েছে।
৩। ভাতৃসংঘের ওপর আসাদ শাসকগোষ্ঠীর দমন ও নিপীড়নের সুযোগে ভারতীয় উপমহাদেশের আলেমদের বিশেষত আবুল হাসান আলি নাদভি ও সাইয়্যের আবুল আ’লা মওদূদী রহ: এঁর কিতাব সমূহ সেখানকার আলিমগণের মধ্যে প্রসার ও প্রসিদ্ধি লাভ করে।
৪। আরব জাতীয়তাবাদ বহুরুপে চর্চিত হয়েছে। হাশেমী রাজবংশ কর্তৃক বৃহত্তর সিরিয়া বা আশ-শাম প্রকল্পে সিরিয়া কেন্দ্রিক আরব জাতিয়তাবাদের প্রচারণা চালানো হতো। যাকে ভাতৃসংঘ বিলাতীদের প্রকল্প বলে সন্দেহ করতো। এর বিপরীতে সমগ্র আরব কেন্দ্রিক প্যান এরাবিজম যা UAR United Arab Republic এর প্রকল্পকে ভাতৃসংঘ সমর্থন দিতো। তার বিপরীতে সিরিয়া ও ইরাক কেন্দ্রিক বাথ পার্টির আরব জাতিয়তাবাদ ও তার বিপরীতে মিশরের নাসিরীয় আরব জাতিয়তাবাদ – সব মিলে একটা ল্যাটকা খিঁচুড়ীর মতো অবস্থা।
৫। ভাতৃসংঘের বাস্তবভিত্তিক রাজনৈতিক সংগ্রাম প্রকল্প ও আল-কায়েদার বিশুদ্ধবাদী সশস্ত্র সংগ্রামের প্রকল্পের মাঝে একটা বিরাট জায়গা ছিলো যা সালাফিসহ ও বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর দখলে ছিলো। মজার বিষয় হলো এই বিরোধ পতাকার ব্যবহারেও উঠে এসেছিলো। অর্থাৎ আল-কায়েদার যোদ্ধারা বিপ্লবীদের পতাকার বদলে কলেমার পতাকার ব্যবহার করতেন। মজার ব্যাপার হলো দীর্ঘকালের কামড়াকামড়ি শেষে সবাই মিলে ঐ UAR এর পতাকায়ই এখন ব্যবহার করছে। তার চাইতে মজার বিষয় হলো পতাকা নিয়ে এই কামড়া-কামড়িতে জিহাদী ঘরানার বলে পরিচিত বহু আলেম কলেমার পতাকা ব্যবহারের শুধু বিরোধীতাই করেন নাই বরং উপহাসও করেছেন। এই কামড়াকামড়ির মাঝখানে আহরার আশ-শামের পতাকা নিয়ে তেমন কোন বাতিক ছিলোনা। কারন পতাকার ব্যবহার দ্বীন চর্চার অংশ নয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
৬। প্রবন্ধকারের মতে ইসলামী বিপ্লবের পর খোমেনীর সরকার যদি আসাদ শাসকগোষ্ঠীর দিকে না ঝুঁকে সিরিয়ান ভাতৃসংঘের প্রতি তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা বিস্তার করতো তাহলে সিরিয়ান ভাতৃসংঘ সিরিয়া কেন্দ্রিক আরব জাতিয়তাবাদ বাদ দিয়ে উম্মাহ কেন্দ্রিক ইসলামী জাতিয়তাকে গ্রহণ করতো। এটাও কাঁচা আলাপ।
৭। কামাল পাশার প্রভাবাধীন তৎকালীন তুর্কি রাষ্ট্র্যের সাথে সীমান্তসহ অন্যান্য বিরোধের জের ধরে আসাদ শাসকগোষ্ঠী উসমানীয় খেলাফতের বিশেষ করে সুলতান আব্দুল হামিদ রহ: এঁর উম্মাহ কেন্দ্রিক ইসলামী জাতিয়তাকে প্রচার করতো। এরই অংশ হিসেবে কুর্দি বংশোদ্ভুত ও পরবর্তীতে সিরিয়ান নাগরিকত্ব অজর্নকারী বিখ্যাত আলিম আল-বূতির মাধ্যমে জাতি রাষ্ট্র্যের জাতিয়াবাদের ধারণাকে খন্ডন করে ও ইসলামী চেতনা বিরোধী প্রতিষ্ঠা করে উম্মাহ কেন্দ্রিক ইসলামী জাতিয়তাবাদের প্রচারণা চালানো হয়। অর্থাৎ আসাদ শাসকগোষ্ঠীর এই প্রচারনার মূলে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস বা দায়বদ্ধতা ছিলোনা, ছিলো নিজেদের রাজনৈতিক কূটকৌশল বাস্তবায়নের দুরভিসন্ধি। যা হিতে বিপরীত হয়ে পরবর্তীতে আল-কায়েদার মতো প্যান-ইসলামিস্ট গোষ্ঠীর উত্থানে সহায়তা করে।
৮। যদিও এটা অত্র প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়, তথাপি আল-শারার উত্থানকে অনেকে এরদোগানের রাজনীতির প্রভাব হিসেবে বুঝতে চেষ্টা করেন। অর্থাৎ নিজস্ব বোঝাপড়ার মূলনীতিতে অটল থেকেও কোন একটি নির্দিষ্ট মতবাদের গন্ডীতে আটকে না যেয়ে বাস্তবতার নিরীখে পদক্ষেপ গ্রহণ করবার যে কৌশল। লক্ষ্য করলে দেখবেন আল-শারা সশস্ত্র সংগ্রামকে কখনোই পরিত্যাগ করা কিংবা খাটো করে দেখবার পক্ষপাতি নন। একই সাথে ভাতৃসংঘের রাজনৈতিক সংগঠন ও কলাকৌশলও তিনি রপ্ত করতে চান। অর্থাৎ তিনি গণতন্ত্র হারাম বলে গোঁ ধরে বসে নেই, আবার শরীয়তকে সংবিধানের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার ব্যাপারেও তিনি অনড়।
যাহোক, অনেক ঘ্যান চর্চাতো হলো। এবার টুপি পিন্দা ঘুমান।