ওফফফ ... গনধে- আপা-

বাংলাদেশের এক রান্নার অনুষ্ঠানে এক সহ-উপস্থাপিকা রান্নার শেষে প্রায় বলতেন, ওফফফ ... গনধে- আপা- । এটা আমাদের জন্য এক বিরাট বিনোদনের উৎসে পরিণত হয়েছিলো। আমরা সে অনুষ্ঠানে এই ডায়ালগ শোনার অপেক্ষায় থাকতাম। খুব সম্ভবত সেই সহ-উপস্থাপিকা বিষয়টি উপলব্ধি করে পরের দিকে এটা আর বলতেন না। কথা হলো গন্ধ যেমন বাস ছড়ানো বোঝায় ঘ্রাণও তেমনি। যদিও সুঘ্রাণ এর বিপরীত দুর্গন্ধ। তথাপি সুবাস অর্থেও গন্ধ ব্যবহৃত হয়। যেমন, ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই। গোলটা এখানেই। ওফফফ ... গনধে- আপা-

তবে বাঙ্গালীর গন্ধ-বাসের অনুভূতি কম বলেই মনে হয়। আপনি যদি ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলোতে যান দেখবেন আলীশান লেক সাইড এপার্টমেন্ট। লেক মানে বুঝছেন তো? নর্দমা। তার দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে হাঁটা দায়। এই জিনিসও কোটি দরে বিকোয়। আবার পুরনো ঢাকার "ঐতিহ্যবাহী" রেস্টুরেন্ট গুলোতে যান। দেখবেন মুরগী, গরু, খাসীর বিরানির ডেকচির পাশে উঁচু করে রাখা পাঁচ-মিশালী কালো ময়লার স্তুপ। বোধকরি শাহজাহানের মতো সৌখিন বাদশাহ যদি এখন মোরগটুলি যেতেন মুরগী হয়ে যেতেন।

কিংবা মনে করেন আপনার ভিনদেশী কোন পরিচিত, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় এসেছে। আপনি খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাকে ঢাকার কোন বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে গেলেন। বাসাপ্রেমীদের দেশে সেই রেস্টুরেন্টের নাম এনরেজী, ফিরীঙ্গি ও আর পাঁচ-দশ বিদেশী ভাষার উদ্ভট মিশেল হলে কি হবে তার ঠিক সামনের ম্যানহোলটি থেকে ভকভক করে দলা গু উপচে পড়ছে। আসে পাশের লোকজন যদিও নির্বিকার। যেন "এটাই নিয়ম”।

দুর্গন্ধ ও আবর্জনার প্রতি এহেন নির্লিপ্ততার একটা সহজ ব্যাখ্যা হলো যে এ অঞ্চলের মানুষ ঐতিহাসিক ভাবে নমশূদ্র-মেথর। আটশ বছরের ইসলামের উপস্থিতিও তাকে পরিচ্ছন্নতার প্রতি ইসলামের যে দায়বদ্ধতা তা শেখাতে পারেনি। আপনি যদি য়ুটুবে ফুড ব্লগ গুলো দেখেন দেখবেন এই উপমহাদেশেই ভারত আর পাকিস্তানের খাবারের পরিবেশে, রাস্তা-ঘাটের পরিবেশে কি আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এমনকি চীনের বিল্ডিং বস্তিগুলোও ভারতীয় ধনকুবেরদের শহর বোম্মের চাইতে ঢের গুনে পরিচ্ছন্ন। ভারতীয়দের সহজাত বাংলা ভাইয়েরা ব্যতিক্রম হবে কেন?

ব্যতিক্রম হবে না বলেই পাশ্চাত্যের পত্রিকাগুলোতে মলরসে ডুবে থাকা এক বাংলার ছবি দেশের নাম রৌশন করে। উই আর ভেরি পাউড ছার।

 

কিন্তু বাদ সেধেছেন জামায়াতে ইসলামীর মুহতারাম আমীর। যেহেতু তিনি শাদিনতা বিরুদি দল করেন তাই তিনি গর্ভিত হতে পারেননা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অসহায়ত্ব তাঁকে মর্মাহত করে। যেহেতু তাঁরা গুপ্ত রাজনীতি করেন সেহেতু সমাজ ও রাষ্ট্র্যের মেকী শান-শওকতের আড়ালে ঢেকে রাখা অবহেলিত, গুপ্ত জনগোষ্ঠীর মর্ম বেদনা তাঁদের নিকট ধরা দেয়।

 

আমি যে বছর প্রথম বিদেশী পত্রিকায় ঐ ছবিটা দেখি তৎক্ষনাত আমার মাথায় আসে যে বাংলাদেশে রোবটিকস ও স্বয়ংক্রিয় যান প্রযুক্তি প্রয়োগ করবার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র হলো বর্জ-ব্যবস্থাপনা। চিন্তার আরও গভীরে যাই। দেশের অর্থনৈতিক ও সুয়ারেজ অবকাঠামোর অবস্থা বিবেচনায় তাকে অবাস্তব মনে হয়। তারপরও কথা থাকে। যেকালে এমন প্রাগ্রসর প্রযুক্ত মানুষের করায়ত্ব ছিলোনা সেকালেও তো তাবৎ দুনিয়া জুড়ে বর্জ-ব্যবস্থাপনার কাজ চলেছে। কয়টা দেশের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের এমন মলে ডুবে দেশপ্রম করতে হয়?

কোন এক ভিডিওতে দেখেছিলাম খোদ চীনে এখন সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় যান এমনকি তথাকথিত কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বাংলাকে বুদ্ধি দেয়া নির্বোধের পরিচয়। শেষে দেখা গেলো ডিজিটাল বানলাদেশ চলছে এ্যাঁয়াই এর উপ্রে। সাত সকালে উঠে বেসিনের কল খুলে দেখলেন হিশু বেরুচ্ছে। বুঝতেই পারছেন। পরিসংখ্যানের কাজ কারবার যেহেতু ভুল বা ব্যতিক্রম হবার একটা সম্ভাবনা তো থেকেই যায়।

তাছাড়া বিগত এক যুগ ধরে ডিজিটাল বানলাদেশের বাঁদরামি দেখে আমরা ক্লান্ত। পাশ্চাত্যের নকল করে ইশটাটাপ, ভেংচার কেপিটালিজম, অন্ডস্ফুটন যন্ত্র, রোবোটিকস, অএব এফস, আইওটি, এ্যাঁয়াই, ভুয়া মেটটিক ডাটাবেজ, ক্যাশলেস ছোছাইটি বানানোর ইতরামি দেখে শাপ-শাপান্ত করে সারা। এই যে অপদার্থের বাচ্চাগুলো সম্পদের এতো অপচয় করার সুযোগ পাচ্ছে অথচ গুরুত্বপূর্ণ কতো কাজের ক্ষেত্রে কারও কোন ভ্রক্ষেপ নাই এটা দেখে দেখে মেজাজ আর কতো খিঁচে রাখা যায়?

দেশের এই হতাশাজনক অবস্থার মধ্যে আমীর মহোদয় সমাজে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরে প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশের সমস্যা দেশী মানুষদের দ্বারাই সম্ভব যদি নেতৃত্ব ঠিক লোকদের হাতে যায়।

তবে যেকোন ইস্যুতে চকের পানি, নাকের পানি এক করে বাংলা নাটক-সিনেমমার মতো যে স্যাঁতস্যাঁতে ডিসকোর্স চলে তা সমস্যাজনক। ঘটনা সেদিকে যাবার আগে বলা প্রয়োজন যে মানুষের দুগর্ন্ধে নাক ঢাকা, তার থেকে দুরে সরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অপমানিত বোধ করাটা অনাকাঙ্খিত। মানুষ মুলত ময়লাকে অপছন্দ করে ময়লা অলাদের নয়। এই স্বান্তনায় কাজ না হওয়াটা বাস্তবতার রুঢ় প্রকাশ। অর্থাৎ এর কোন সহজ সমাধান নাই।

অবশ্য আবর্জনা ব্যবস্থাপনার সবটুকু নুইসেন্স যে শুধু পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পোহাতে হয় তা তো নয়। আমি যখন কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম তখন সাত সকালে গোসল করে ছুনু-পাউডার মেখে কর্মক্ষেত্রে যাত্রা কালে প্রতিদিন অফিস টাইমে রাস্তার ঝাড়ুদারদের ধুলার ঝড় ও ময়লার ট্রাকের দুর্গন্ধের কবলে পড়তে হতো। আসলে সাত সকালের ফুরফুরে মেজাজে যখন ঝাড়ুর ধুলাবালি নাকে প্রবেশ করে, কিংবা ভাগাড়ের উৎকট গন্ধ স্নায়ুতন্ত্রকে ঝাঁঝিয়ে দেয় তখন দেশপ্রেমে কাতর হওয়া ছাড়া উপায় কি! আল হামদুলিল্লাহ ফর এভরিথিং। এজ এ বানলাদেশী আই এম পাউড।

আমি এও ভাবি এই যে বামপন্থার লোকভোলানো রাজনীতি, মিডিয়া পট্টিতে যারা ইনিয়ে বিনিয়ে ‘শ্রমিক-মজদুর’ এক হও বলে ঝড় তোলে তাদের কেউ অদ্যবধি এ নিয়ে আলাপ তুললো না কেনো? আসলে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যাদের রাজনীতি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়ে এসব আলাপ কস্মিনকালেও তাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করবে না। তারাই তো বলে, রাজনীতির ভিত্রে পলিটিস ঢুইকা গেছে। এজন্যই বামপন্থী গুলোরে আমার হজম হয় না। এদের দেখলেই বলি, ওহ আপা- গন্ধে-

Popular posts from this blog

আসেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাজাই

ইসলাম ও গণতন্ত্র

জামাতের ভোট: একবারে না পারিলে দাও শতবার