আসেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাজাই

এই ম্যার কান্নাকাটি যতোবারই দেখেছি ততোবারই ইসকুল জীবনের এক বড়ো ভাইয়ের কথা মনে পড়েছে। বছর খানেক যাবৎ এনিয়ে লিখবো লিখবো করে লেখা হয়ে ওঠে নাই। তো ঘটনা হইলো হেই শোমো মেট্টিক-ইন্টার পরীক্ষার চাপে পোলাপাইন পাগল হয়ে যাইতো। এটাকে উন্নত শিককা বেবস্তার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হইতো। এটা আমি পরবর্তী জীবনেও দেখেছি। সরকারী বার্চিটির মাস্টরগুলোর একটা কমন আত্মম্ভরিতা ছিলো যে তাদের পরীক্ষাগুলোতে খুব কম শিক্ষার্থী-ই পাস করতে পারে! ওয়াহ! ওয়াহ! আসো তুমরারে ফুলের মালা দিই। 

তো আমাদের এক বড়ো ভাই বেশ মেধাবী। কি ভরাট গলা! নজরুলের বিদ্রোহী কোবতে আবৃত্তি করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। মেটটিকে খাড়িয়েছিলেন। মানে স্ট্যান্ড করেছিলেন। ইন্টারেও করার কথা ছিলো। কিন্তু stand করার বদলে উনি stun করে গেলেন।

পরীক্ষার আগে ওনার সেই কি প্রস্তুতি! প্রথম পরীক্ষা ছিলো পরিসংখ্যান। পরীক্ষাগুলো ওভাবেই সাজানো হতো। সহজ পরীক্ষা দিয়া শুরু করে মইদ্য খানে চৈত মাসের ঠাডা ফেলে এরপর আবার আয় বৃষ্টি ছেপে। মানে এক্কেবারে শ্যাষে সমাজবিজ্ঞান, প্রাকটিক্যাল ইত্যাদি বংসং। কিন্তু দেখা গেলো প্রথম দিন পরীক্ষা দিতে বসে উনি বুঝতে পারলেন যে উনি সব পড়া ভুলে বসে আছেন। কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। তারপরও শিক্ষকদের উৎসাহ, দয়া, করুনায় সিক্ত হয়ে কিছু উত্তর-দক্ষিণ সূত্রাবলি লিখে দিয়ে আসলেন।

পরীক্ষা শেষে হিসবে করে দেখলেন ওনার পাস করবার কোন চান্স নাই। হেশোমো এক পরীক্ষায় ফেল করলেই সর্বোপরি ফেল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এবং পরবর্তী বছর ছাড়া পরীক্ষা দেয়া যেতো না। তাও সবগুলো বিষয়ে পুনরায় অবতীর্ণ হতে হতো। বুঝতেই পারছেন ইউরনার, মাই লর্ড, হিস এক্সেলেন্সির বিলাতী কলোনিয়াল হিসাব কিতাব।

তো যেহেতু বাকী পরীক্ষা দিয়েও কোন লাভ নাই তাই উনি হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। দেখতাম বিকেলে মসজিদে যাবার সময় একাকি আপন মনে বিড়বিড় করতেন। দেশের শিক্ষা অব্যবস্থা কতো মেধাবী জনের জীবন ধ্বংস করেছে কে জানে? সেই অর্থে বাংলায় লেখাপড়া জানা প্রত্যেকেই একেকজন ইয়েনিশেরি:

Bu meydânda nice başlar kesildi. (বু মেইদানদা নিজে বাশলার খেসিল্দি)

Hiç olmaz soran! (হিচ ওলমায সোরান!)

অর্থাৎ এই ময়দানে কতো কল্লা গড়াইলো কেউ জিগায়োনা। কিন্তু তাতে কি? বাংলার অভিজাত কুলাঙ্গার গুলো মস্তক উঁচাইয়্যা (Baş üryân), সিনা পুরাইয়া (sîne püryân), কলমের খোঁচায় রক্ত গংগা বইয়ে দিচ্ছে (kılıç al kân)।

স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। যে হাবিলদার স্টাফ আমাদের ড্রিল করাতেন তিনি প্রায় হুংকার দিয়ে বলতেন:

এ- কোমিনের বাসসারা! দেমাগ হাযী-র!! প্যাট দাবানো-। বুক ফুলানো-। লক-খো দিশটি শামনে।

এরপর এনাটমি ও জিওগ্রাফির সমস্ত সূ্ত্র অস্বীকার করে কিশোর বয়সের লিকলিকে ঠ্যাং দিয়ে ধপা-স করে বিকট শব্দে এমন ভাবে চেক ইন করতে হবে যেনো জমিন বিদীর্ণ হয়ে যায়। তাও সে-ই জুতো দিয়ে যার হিল পেরেক ঠুকে জোড়া দেয়া। এবং ড্রিলের চোটে পেরেকের মাথাগুলো জুতোর ভেতরে বেরিয়ে এসে গোড়ালিতে ঘায়ের সৃষ্টি করছে। কিন্তু কেন? ঐ যে বলেছিলাম বিলাতী মা লর্ড মাননীয় কুত্তার বাচ্চা গুলো শিখিয়ে গেছে। না শিখে উপায় আছে? এ্যাঁ?

বাস্কেটবল কোর্টের পাকা জমিনে কিছু পায়ের দাগ ছিলো। স্টাফ আমাদের বুঝিয়ছিলেন এগুলো পীরিমীয অর্থাৎ আমাদের পূ্র্বসূরী এলডারলি পীর BALপাকনাদের পদচিহ্ন! যারা এতোকাল জামাত-শিবিরের টার্গেট করে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করা নিয়ে চুদুর-বুদুর করেছে তারা এরকম অনুভূতিপ্রবণ বয়সের (impressionable age), কিশোরমতী শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই কার্যক্রম নিয়ে কিছু লাঁকানাকা তো কত্তে পারে।  নাকি শুধু জামাত-শিবির-মাদ্রাসা গুলো করলে দোষ?

ইশকুল জীবনের শারিরীক কোন কর্মযজ্ঞ, প্রশিক্ষণ, খেলাধুলা নিয়ে আমার মনে কোন ক্ষোভ নাই। এগুলো বরং আমি ব্যাপক উপভোগ করতাম। কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন আছে মেলা। সেই অনুসন্ধিৎসা থেকে আমি খুঁজে দেখলাম খোদ বিলাতী বাহিনীর সদস্যারা এরকম করে কুচকাওয়াজ কিংবা চেক ইন করে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তা-ই রীতি। শৃঙ্খলা এবং সমন্বয় (synchronization) -কেই বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়।

সমন্বয় আমাদেরও করানো হতো। ঐ যে স্টাফের পরিচিত ভরাট কন্ঠে হুকুম:

জলদি তালে- তাল।

কী দরাজ, ভরাট গলা! রাতা মোরগার কুক কুরু-ক কুক! পৌরষত্ব যেনো কন্ঠ দিয়ে ঠিকরে পড়ে।

ইশকুলে যারা সিনিয়র চিটিজেনদের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলেন তারা নিজেদের নবাবী প্রতিষ্ঠায় চিট করতেন। অর্থাৎ মেট্টিক-ইন্টারের পোলাপান নিজেদেরকে জাহির করতে চাইতো পিটি-ড্রিলে ফাঁকি দেয়ার মধ্যে দিয়ে। আউমি সেকুলার শিককা বেবস্তায় গড়ে ওঠা জেনজি (GenZ) এর ভাষায় dhon এ BAL গজিয়েছে, পোঁদে তেল জমেছে, এট্টু ইয়ে না করলে হয়?

তো ওনারা শীতকালে চক্কর (800 meters) দেবার সময় কুয়ায়াশার ভেতরে হারিয়ে গিয়ে দৌড়ানোর বদলে হাঁটতেন। তার দাওয়াই ছিলো ঐ স্টাফের ভরাট গলা। ক্ষণে ক্ষণে ঘন কুয়াশার মধ্য থেকে ভরাট কন্ঠের হুংকার ভেসে আসতো:

এইপ! হাঁটে কেএ-ইপ!!

এটা অবশ্য অন্য স্টাফ। কোমিনের বাসসা বলা-টা না। উনি আরেকজন। পোলাপান ওনার নাম দিয়েছিলো কামান স্টাফ। কারন উনি জাঙ্গিয়া পরতেন না। সাত সকালের morning wood নিয়ে অবলীলায় প্যারেড গ্রাউন্ডে চলে আসতেন। জঙ্ঘা থেকে ওনার কাঞ্চন-টা চির উন্নত মম শির বলে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতায় পৌঁছলেও উনি নির্বিকার।

অত্যন্ত দরদী পিতৃবাৎসল একজন স্টাফ ছিলেন। শারিরিক প্রশিক্ষণের সময়ে আমাদের কষ্ট ওনাকেও স্পর্শ করতো। কিন্তু তাই বলে কখনোই প্রশিক্ষণে কোন ছাড়, কোন শিথিলতা দেন নাই। একবার চক্কর দেবার সময় আমাদের এক ভাইয়ের হাগা ধরলো। ভাইয়ের চেহারার অবস্থা দেখে হাগার চাপ সম্পর্কে একটা আনুমানিক ধারনা প্রতিষ্ঠিত হলো। তারপরও ষ্টাফ ওনার চাইতে করুন মুখ করে জিজ্ঞেস করলেন: চাপ বেশী? ভাই একটা গোঙ্গানীর মতো শব্দ করলেন। স্টাফ অনুমতি দিতেই এক দৌড়ে ফুলার রোড (কিংবা পলাশী; আপনাদের যেটা বায়াস)।

কিন্তু আমরা তখনও কেউ বুঝে উঠতে পারিনি যে ভাইটি আমার টম হ্যাঙ্কস। হাগার অভিনয় করে দশ চক্করের দু-দুটো চক্কর মেরে দিয়েছেন। ব্যস আর যায় কই। পোলাপান সিস্টেম করা শিখে গেলো। কিন্তু এটা বেশি দিন টিকলো না। কামান স্টাফ বুঝে গেলেন। সুতরাং এরপর যে টম হ্যাঙ্কস হতে চাইলো সে ডাইরেক্ট মারা খাইলো: হানড্রেড ফনটোল (front roll) কেরি অন! ভাইটি মুখ আরও কাচুমাচু করে বলে উঠলো: স্টাফ একটু! স্টাফের হুংকার: কোন কথা হবে না! অন থাউজেন ফনটোল কেরি অন। ভাইয়ের শেষ প্রচেষ্টা: স্টাফ প্লী-ই-য! স্টাফের সোজা জবাব: মিততুর আগ পর্যন্ত ফনটোল করি অন।

এই যে এতো কঠোর পরিশ্রমের পরও কোনদিন এই দুই স্টাফের ব্যাপারে বিরুপ ধারণা তৈরী হয়নি তার কারন তারা আসলেই প্রশিক্ষক ছিলেন। নির্যাতক নন। অর্থাৎ তাঁরা তাদের প্রশিক্ষক পদের মর্যাদা ধরে রাখতে পেরেছিলেন। যা দেশে দুর্লভ। এদেশে শিক্ষক-প্রশিক্ষক ইত্যাদি পদগুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কুলাঙ্গার কলুষিত করেছে।

তথাপি সেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। যেমন তাঁদের ভাষা। অন্য স্টাফদের তুলনায় এনাদের ভাষা নস্যি। একবার একটা ব্যয়াম (jumping jack) করার সময় এক স্টাফ একজন প্রশিক্ষণার্থীকে বললো: এই তোর পা ফাঁক হচ্ছে না কেনো? মাসিকের ত্যানা গুঁজে রেখেছিস নাকি!

মজার ব্যাপার হলো যে ঔপনিবেশিক শোসকদের নিকট থেকে আমরা ভাষাগত এই "ঐতিহ্য" প্রাপ্ত হয়েছি তারা কিন্তু তাদের নিজেদের নাগরিকদের সাথে মিলিটারি একাডেমিতেও এভাবে কথা বলবার সাহস পায় না। নিয়ম নাই। এমনকি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে উদ্ভুত যে সংক্ষুব্ধ ভাষা তার পরিশীলন ও পরিমার্জনেও আমরা তাদেরকে উদ্যোগি হয়ে উঠতে দেখছি।

 

 

 


 
পাঠক শিক্ষার আলাপ কিন্তু শিক্ষাক্রম কিংবা শিক্ষানীতিতে আটকে থাকার বিষয় নয়। এর সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয়াবলিও সম্পৃক্ত। এই যে আমাদের দেশসহ এশিয়ার প্রায় দেশগুলোতে শিক্ষার্জনের সাথে জীবিকা অর্জনের একটা সংযোগ করে অমানষিক একটা ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে তার মূলে রয়েছে উপনিবেশোত্তর দারিদ্রের কষাঘাত থেকে বেরিয়ে আসবার সংগ্রাম।
 
 
কিন্তু তাই বলে পুরো একটা জাতি দিগ্বিদিক জ্ঞানশূ্ন্য হয়ে ছুটে বেড়াবে এটাতো মেনে নেয়া যায় না। নাকি? শিক্ষা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি নিয়ে আলাপ হতে পারে কিন্তু এর উদ্দেশ্য, সার্বিক প্রক্রিয়া ও কাঠামো সম্পর্কে তো একটা মৌলিক বোঝাপড়া থাকবে হবে নাকি? না এখানেই সমস্যা। সেই সমস্যারই সমাধান আগে করতে হবে। উদ্দেশ্যটা কি? চাকরী করা? চেতনা করা? মুসলমান হওয়া? আঁতেল হওয়া? দেশপ্রমী হওয়া? নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো? কোনটা?

বহু বছর আগে শেইখ হামযা ইউসুফকে বলতে শুনেছিলাম যে ওনারা ওনাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাইতুনা-তে কিভাবে ইসলামের স্বর্ণযুগের শিক্ষা পদ্ধতির পুনরুত্থান করতে উদ্যোগী হয়েছেন। এটা অবশ্য এখনো বিভিন্ন পদ্ধতির মাদ্রাসা শিক্ষায় বিদ্যমান। যেমন নাহু ও সরফ (ব্যাকরন), মানতেক (যুক্তিশাস্ত্র), এবং বালাগা (অংলকারশাস্ত্র)। যা প্লেটো অনুপ্রাণিত গ্রীসের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার অনুরুপ। মানে ট্রিভিয়াম: গ্রামার, লজিক, রেটোরিক। এর সাথে উচ্চতর শিক্ষায় পাটিগণিত, জ্যামিতি,  খৃস্টীয় ধর্মতত্ব থেকে অনুপ্রাণিত সুরশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিদ্যা। এখানেও কিন্তু ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা শিক্ষায় তেমন ব্যতিক্রম নেই সুরশাস্ত্র ছাড়া। তবে পার্থক্য উদ্দেশ্যে। যেমন মুসলমান জ্যামিতি ও পাটিগণিত এ আগ্রহী হয়ে উঠেছে মূলত ওয়ারিশ সূত্রে সম্পত্তি বিভাজনের জটিলতায় পড়ে। আর জ্যোতির্বিদ্যায় তার আগ্রহ জন্মেছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মতো আদায় করার তাগিদ থেকে। তাছাড়া যদিও সে সুরশাস্ত্র বলে আলাদা কোন শাস্ত্র রাখছে না কিন্তু কোরানের কিরাআতের যেই সুর, লয়, ছন্দ তার বিদ্যা, ধরন ও প্রভাব তা সুরশাস্ত্র বৈ তো কিছু নয়।

তাহলে ঘুরে ফিরে প্রশ্ন যেখান গিয়ে দাঁড়ায় তাহলো বাঙ্গালি কি জন্য শিক্ষা অর্জন করতে চাইছে? সেই প্রশ্নের সমাধান হলে পরে তখন তা অর্জনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা যায়।

যদি বাঙ্গলামি ছাড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলেও প্রশ্ন জাগে যে এই ট্রিভিয়াম আম জনতার জন্য ঠিক কতোটুকু আবশ্যক? আমার মনে হয় এর একটা ধারনা আপনি পাবেন অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট কর্মযজ্ঞের একটা আনুমানিক অর্থনৈতিক মূল্য হিসেব করে। আমার বরাবরই একটা ধারনা ছিলো যে মুসলিম উম্মাহর একটা সমস্যা হলো শিক্ষার তারল্য। অর্থাৎ শিক্ষিত লোকের ইনফ্লেশন। মনে রাখবেন শিক্ষিত হওয়া মানেই জ্ঞানী হওয়া নয়। শিক্ষিত লোকের আধিক্যের সাথে উপনেশবাদী অর্থনীতির মেলবন্ধন হয়ে জাতির কর্মক্ষমতার মারাত্মক অবনমন ঘটেছে। কারন শিক্ষা এক ধরনের বিলাসিতা। আভিজাত্য। এই বিলাসিতার ভার বহন করবার মতো অর্থনীতির অনুপস্থিতিতে মানুষকে আরও অধিক হারে শিক্ষিত করে তোলা আত্মঘাতি বলে মনে হয়।

তবে এতো উচ্চমার্গের কথা বেশী না বলাই ভালো। দেশের উচ্চশিক্ষিত শ্রেনীর বড়ি হাগা শুরু হতে পারে। তাই ভিডুতে ফিরে যাই।

এইযে এশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার নেতিবাচক চাপে পড়ে একশ্রেনীর মানুষ তার শৈশব হারিয়ে ফেলছে এর কিন্তু একটা ভয়াবহ পরিণাম আছে। যদিও এর থেকে উত্তরণের পথটা সহজ নয়। আমরা যখন মুগ্ধ চোখে পাশ্চাত্যের শিক্ষার্থীদের আয়েশী ঢংএ মুড়ি খেতে খেতে গেম খেলতে খেলতে শিক্ষার্জন দেখি তখন ভুলে যাই যে এসব দেশগুলোর একটা উপনিবেশবাদী অর্থনীতি ছিলো। যার সূ্ত্রে তারা বিশালাকার সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়েছে।
 

যদিও এখন এসে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যাচ্ছে যে তাদের শিক্ষার্থীদের ঋণের পরিমাণ সব হিসেব নিকেশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে তারা শিক্ষা অর্জনের যৌক্তিকতা ও এর সংশ্লিষ্ট বাটপারি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
 
 
তাদের জেনজি (GenZ) পোলাপান তথাকথিত FANG কোম্পানি গুলোতে চাকরী পাবার জন্য বাংলা গুলোর মতো বিসিএস যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
 
 
তথাপি অধিকাংশের চাকরী না হওয়ায় তারা নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে হতাশায়। এই বিষয়টা এক যুগ আগেও সেখানে দেখা যেতোনা। মাঝারী এবং ক্ষুদ্র সফটওয়্যার কোম্পানীগুলো সেখানে বিরাট অংশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতো।
 
 
আমার মতে এমনটাই হওয়ার কথা ছিলো। কারন এমনটা এই উপমহাদেশেও হয়েছে। তাহলে আমেরিকায় হবে না কেনো? মূলত শোষন যদি হয় অর্থনীতির ভিত্তি সেই অর্থনীতি টিকে না। এটা একটা সহজ ও ধ্রুব সত্য। আর যখন অর্থনীতি ভালো থাকেনা তখন আউমিলীগের স্মার্ট বানলাদেশ দুরে থাক আইভিলীগ ইউনিভার্সিটি দিয়েও কোন কাজ হয়না।

একটা গল্প বলে শেষ করি। আমার এক কলিগের ৮ সন্তান ছিলো। বয়স ৩৫-৪০ এর বেশী হবে না। তার সাথে একবার চাইল্ড প্রোডিজি নিয়ে গল্প করার সময় সে আমাকে বলেছিলো যে তার সন্তানেরা যদি সুখি জীবন যাপন করতে পারে তাইলেই সে তৃপ্ত। সন্তানদের থেকে তার আর চাওয়া বা পাওয়ার নাই। ব্যাপারটা আমার চিন্তাজগতে এমন গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো যে এখনও তার সূ্ত্রে আমি নানা চিন্ত-ভাবনার খোরাক পাই।

Popular posts from this blog

ইসলাম ও গণতন্ত্র

জামাতের ভোট: একবারে না পারিলে দাও শতবার