আজকের গ্যাজানির বিষয়: আওমিলীগের নির্গমন, বোগদাদীর আগমন

একটা মজার ব্যাপার হলো জামাতকে যেমন এই উপমহাদেশে ছুপা শিয়া বলে প্রচার করা হয়, তেমনি ইখওয়ানুল মুসলিমীনকেও আরবে ইরানের দালাল বলে প্রচার করা হয়। এটা কারা করে এবং কেন করে তা পরিষ্কার মাথার লোকদের বুঝতে বেগ পেতে হয় না। তবে মানুষের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মাথা গোবরভর্তি। সমস্যা এখানেই। যখন প্রেসিডেন্ট মুরসি ইরান গেলেন, উনি ইরানি শিয়াদের সামনে সাহাবাদের রা: মর্যাদা তুলে ধরলেন। মুরসি ও আহমেদিনেজাদ এর যৌথ প্রযোজনায় মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন মেরুকরনের সম্ভাবনা দেখে তাগুতী শক্তি ঘাবড়ে গিয়েছিলো। ইসরায়েল গাজ্জায় হামলা করা শুরু করলো। মুরসির এক ফোনে সেই হামলা বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু আরবের নতুন প্রজন্মের কাবিলগুলোর এতো স্ট্রাটেজির পরও ইসরায়েলের যুদ্ধ আজ অবধি থামানো যাচ্ছে না। যারা ইখওয়ানকে শিয়াদের সহযোগী বলে গালাগাল করেছে, ইখওয়ানের বোকামীতে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বাড়ছে বলে প্রপাগান্ডা চালিয়েছে, আজ তাদের এতো কূটনীতি ও স্ট্র্যাটেজিক ম্যানুভারের পরও গাজ্জার যুদ্ধে অন্যতম সুফল ভোগী ইরান। একই ঘটনা এই উপমহাদেশেও। মাওলানা মওদুদী কে শিয়া প্রভাবিত বলে বহু প্রচার প্রপাগান্ডা করা হয়েছে। অথচ বলা হয়ে থাকে যে ওনার লেখনীর সুবাদেই আয়াতুল্লাহ খোমেনী উম্মুল মু'মিনীন আয়িশা রা: সহ অন্যান্য সাহাবদের চরিত্রহণনের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারী করেছিলেন। বিপরীত পক্ষে উম্মতে মোহাম্মদীর জাতীয় গাদ্দার ধর্মব্যবসায়ী আওয়ামীলীগের পেয়ারের আকাবির হাফেজ্জী হুজুর ইসলামী বিপ্লবের পর খোমেনীকে চিয়া-কাপের বলা সহ তার বিরুদ্ধে বহু ফতোয়াবাজী করে বলেছিলেন যে খোমেনীর ইসলাম তারা চান না। ঠিক যেমন অনেকে এখনও বলে যে মওদুদীর ইসলাম ওরকম। এরপর আমরা কি দেখলাম? খোমেনীর দাওয়াত খেয়ে হাফেজ্জী হুজুর বয়সে অগ্রজ হওয়ায় খোমেনীর আনুরোধে তাকে মোক্তাদী বানিয়ে নামাজের ইমামতী করে এসে রাতারাতি খোমেনী ভক্ত হয়ে যায়। এই লোকের নামে আওমীরা ঢাকার একটা রাস্তার নামকরণ পর্যন্ত করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার না নজদি, না সালাফি, না দেওবন্দী, না তাবলীগীদের ওপর কোন আক্রোশ আছে। আমার মুল ক্ষোভটা এদের একটা বড়ো অংশের পাঁঠামি থেকে উদগত উম্মতে মোহাম্মদীর যে ক্ষতি সে ক্ষতির প্রতি মর্ম বেদনা থেকে। যখন বোগাদাদী হুজুর কালা পতাকা নিয়ে খেলাফত করে ফাটিয়ে ফেলছিলো তখন বাংলাদেশে এই আওমী ও তাদের ঘরানার হুজুর শ্রেনীটিই বান্দরের মতো লাফাচ্ছিলো। অথচ বোগদাদীর কুকর্ম ও পাঁঠামী তার তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই প্রতিষ্ঠিত। বিশেষ করে যখন থেকে সে আল-কায়েদার প্রথিতযশা ভেটেরান যোদ্ধাদের অবলীলায় মুরগীর মতো জবেহ করা শুরু করেছিলো। আমার মনে পড়ে সারাদিন পেশাগত কর্মের খাটা-খাটুনি শেষে সারারাত ইউটিউবে তকবীর সহ এইসব কোপাকুপির ভিডিও দেখে সেদিন ফজরের নামাযে তকবীরটা পর্যন্ত বলতে মনে টানছিলো না! অথছ দেশী বান্দরগুলোর সেই কি লাফাঙ্গা। ঐ যে আজ রবিবারে একটা কাজের লোকের ডায়ালগ ছিলো: আইজগা ফাডাফাডি হইবো! ঐরকম অবস্থা। একবার ভেবেছিলাম বলদগুলোর এহেন কর্ম রেকর্ড করে রাখি। সময় কই? তাছাড়া এরকম অনুৎপাদনশীল কাজে সময় ব্যয় করার আগ্রহটাই বা হবে কেন? কথা হলো মধ্যপ্রাচ্যেও বহু জিহাদী হুজুর আছে। তবে তারা দেশের গুলোর মতো ছুপা জিহাদী নয়। অন্তত এরা যুদ্ধের উস্কানি দিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর পালিয়ে যায় না। তথাপি বোগদাদীর উত্থানে বোধ করি তারাও উপলব্ধি করেছিলেন যে কেনো ইসলামিস্ট তথা ইখওয়ান ও জামাতিরা বারংবার পলিটিকাল লিডারশীপ ও সংগঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকেন। যুদ্ধ শুরু করা সহজ। শেষ করা সহজ নয়। ফতোয়াবজী করা সহজ। কিন্তু এর দায়ভার নেয়া সহজ নয়। একারনেই আমরা দেখেছি যে যুদ্ধের প্রতিকুলতায় পড়ে তথাকথিত জিহাদীরা কিভাবে নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষে, তাকফিরে লিপ্ত হয়েছে। এবং সেই সুযোগে এমআই-সিক্স সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর এজেন্টরা আল-জিব ঘা করে আরবি বলে মূর্খ তৌহিদী জনতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিলো। এরপর রাতারাতি হাফিজাহুল্লাহ হয়ে উঠে সিরিয়ার বিভিন্ন গ্রুপের বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রাণ সংহরণ। একমাত্র ব্যতিক্রম আফগানের তালিবানরা। তাও তাদের মাদ্রারাসা ভিত্তিক ঐক্য ও সংগঠনের কারনে। অর্থাৎ সেটা পলিটিকাল নয় বরং ধর্মীয় ফিরকা ভিত্তিক। যার দূর্বলতা আমরা ইতিমধ্যে দেখা শুরু করেছি। যে হানাফি মাজহাবের মধ্যে একটি বিষয়ে একাধিক মাসলাহা থাক সত্ত্বেও তারা শুধুমাত্র তাদের "আকাবীরদের" সমর্থিত মাসলাহাকে রাতারাতি আইনি ভিত্তি দেয়ার প্রয়াস চালাচ্ছেন। এর পরিণতি আমরা ভবিষ্যতে দেখবো। যাহোক সেটা তাদের বিবেচনা। নিজ দেশে পাগলের অভাব নাই আরেক দেশের কথা বলি কোন মুখে। আপনাদের হয়তো স্মরণে থাকবে বিলাতী এক বাঙ্গালী মেয়ে আইসিস ব্রাইড হিসেবে দেশের নাম রৌশন করেছে। তাকে আমি চিনিনা। কাফেররা তার বিরুদ্ধ কি বললো তা গুনিনা। কিন্তু যখন জানলাম সে আওমী পরিবার থেকে আসা তখন হিসাব পরিষ্কার হয়ে গেলো। সেই মেয়ে নাকি এখন বুরখা ছেড়ে ছাইয়্যা হয়েছে। এটাই হবার কথা। কারন একটি বিশেষ ধরনের অপদার্থ, কুলাঙ্গার না হলে কেউ আওমীলীগ করে না। আমার এক পরিচিতি আওমী পরিবারের একজন আমাকে ছেলে বেলায় বলেছিলেন যে মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযমের বাসার ড্রইং রুমে একটা সিংহের মুখ আছে। তার নাক চেপে ধরলে মুখ থেকে মদ বেরোয়। সেই মহিলা এখন ছালাফি হুজুরনি। শুনেছি তাকফির করে বেড়ান। আওমীলীগ যে কারনে স্বীকৃতি প্রাপ্য তা হলো যে অত্র অঞ্চলের বোকচোদ, পাঁঠা, অপদার্থ, কুলাঙ্গার, মানে যা কিছু নীচ ও হীন তাদের সকলকে এক ছাতার নীচে তারা আনতে সক্ষম হয়েছে। যখন জামাতের নেতাদের ঝোলানো হচ্ছিলো তখন পাড়ার আওমী পরিবারের ইস্লাঁমিক মাইন্ডেড এক ছোকরা সহ বন্ধু বান্ধব নিয়ে বিকেলে রেস্টুরেন্টে বৈকালিক আলাপে বসেছি। তখন কার যেনো ফাঁসি হলো পাকিস্তান থেকে ইমরান খান সাহেব নিন্দা জানালেন। তো ঐ পোলার যুক্তি হলো যে এতোদিন তার মধ্যে জামাতের এই নেতাদের অপরাধের ব্যাপারে যে সন্দেহ-সংশয় ছিলো সেদিন পাকিস্তান পার্লামেন্টে আনিত নিন্দা প্রস্তাবের মাধ্যমে তা দূরীভূত হয়েছে। অর্থাৎ এই এতো কোর্ট, কাচারি, বিচার-আচার, সাক্ষী-সাবুদ হলো তারপরও একনিষ্ঠ আওমী পরিবারের এই তাবলীগি পাঁঠাটি নিশ্চিত হতে পারেনি যে এই অভিযুক্তরা দোষী। প্রমাণিত হয়েছে পাকিস্তানের একজনের বিবৃতিতে! এই হলো এদেরে বিচার শক্তি। এতোসব কথা বলার উদ্দেশ্য হলো এই যে তথাকথিত বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে পরিস্থিত তাতে মনে হচ্ছে যেনো সিরিয়া-ইরাক রেসিপির পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ক্যাম্প বুকাতে যেভাবে ছাদ্দাম হোছেনের উদোম হয়ে যাওয়া বাথিষ্ট জেনারেলরা মানে মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাষায় ক্যাশপ্রেমী সোনাবাহিনী ছালাফিদের সংস্পর্শে এসে রাতারাতি বোগদাদী বনে গেলো মনে হচ্ছে যেনো বিগত এক যুগ যাবত সেই রেসিপিতে অত্র অঞ্চলে একটি বিশেষ বাহিনীর উত্থানের মাধ্যমে ফিৎনা-ফাসাদ ছড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। না হলে কি করে এই হিন্দুয়ানী ইসলামের অনুসারি দেওবন্দীগুলো ও আওমী পরিবারে বেড়ে ওঠা "হাফিজাহুল্লাহ" গুলো একত্র হয়ে একই ফ্যাসিস্ট বয়ান ধরেছে যে এদেশে গণতন্ত্র তথা জনমতের কোন গুরুত্ব থাকতে পারবেনা? শাসন ক্ষমতা বদলের কোন নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাখা যাবে না? কেন সবাই মিলে জামাতের পুচ্ছে আগুন দেয়ায় ব্যস্ত? যে জামাত কারও ভিক্ষার টাকায় প্রতিষ্টা হয় নাই। প্রতিষ্টা হয়েছে মাওলানা মওদুদী সাহেবের সাহিত্য ভান্ডার থেকে প্রাপ্য অর্থ যার পুরোটা তিনি তার সংগঠনের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। যে জামাত প্রায় একশ বছর আগে মুসলমানদের মাঝে ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনের আওয়াজ তুলেছিলো। যে জামাত উপনিবেশোত্তর সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সংসকার করার পথ ও পদ্ধতি বাতলে দিয়েছিলো। কেনো তাদের বিরুদ্ধে এই আক্রোশ? কেনো মধ্যপ্রাচ্যের ইখওয়ানুল মুসলিমিনকেও স্বাধীনতা বিরোধী বলা হয়, যেখানে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তাদের দশ সহস্রাধিক মুজাহিদ অংশ নিয়েছিলেন? এই স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি? কাদের জন্য এই স্বাধীনতা? তৌহিদবাদের এমন কি নতুন সংজ্ঞা হাজির করা হলো যার ভিত্তিতে ইখয়ান হয়ে পড়লো পর আর ইসরায়েল হয়ে পড়লো আপন? আক্বিদার এমন কি আলাপ শুরু হলো যে ইসলামকে বিজয়ী করার স্বার্থেও নিতান্ত বিপদে না পড়লে জামাতের সাথে হাত মেলোনা যায় না কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বার্থে বিধর্মী বৌদ্ধদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে চলা যায়?

Popular posts from this blog

জুলাই কাহা-নি

অত্রাঞ্চলে আমি-ই রাষ্ট্র্য, আমি-ই তার পতি

The Case for Rohingyas