ইসলাম ও গণতন্ত্র
যারা গণতন্ত্র-কে কুফরী মতবাদ বলে প্রচারের নামে জামাত বিরোধিতায় নেমে পড়েছে তাদের হিসেবে জামাতের জন্য তাদের কল্লা উড়িয়ে দেয়া ফরজ হয়ে পড়েছে। কারন হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী মুসলমানদের মধ্যে নেতৃত্বের বিষয়ে ঐক্যমত্য হবার পর কেউ নতুন করে নেতৃত্বের দাবী নিয়ে আসলে তার কল্লা উড়িয়ে দেয়া উচিত। সমাজের মধ্যে বিভাজন ও ফিৎনা ছড়িয়ে পড়াকে ঠেকানোই এর উদ্দেশ্য। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে ধরে নেয়া যায় যে তাদের ব্যাপারে দেশের ঈমানদারদের মধ্যে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং নেতৃত্বের অন্য যে কোন দাবীদারদের ফাসাদ সৃষ্টিকারী বিবেচনা করে তাদেরকে সেইভাবে প্রতিরোধ ও দমন করা আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে যেভাবে খারেজীদের সাইয়্যেদুনা আলী রা: প্রতিরোধ ও দমন করেছিলেন। তবে এটা শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে যারা গণতন্ত্র-কে কুফরী মতবাদ বলে দেশের ঈমানদার জনগোষ্ঠীর সরলতা নিয়ে ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এটা যে প্রধানত পতিত আওয়ামী মাফিয়াদের কুটকৌশল তা সচেতন নাগরিক মাত্রই বুঝে গিয়েছেন। তবে এই ফাসাদে ফাতরা হুজুরগুলোরও দায় আছে এ বিষয়েও কোন সন্দেহ নেই।
এক্ষেত্রে এ বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার যে ইসলামী শরিয়তে ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি সংকীর্ণ নয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র একটি প্রক্রিয়াকে ইসলামী প্রক্রিয়া বলে ধরে নেবার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং ইমারত, রাজতন্ত্র ইত্যাদিকে শাসনতন্ত্রের ইসলাম স্বীকৃত পদ্ধতি বলবার যেমন কোন সুযোগ নেই, তেমনি গণতন্ত্রকে ইসলাম বিরোধী বলবারও কোন সুযোগ নেই। গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের সংখ্যাধিক্য ভোটে শরীয়ত বিরোধী বিধি-বিধান, রসম-রেওয়াজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলে যে আশংকার কথা বলা হয় সে আশংকা কি ইমারতে, রাজতন্ত্রে থাকেনা? বরঞ্চ বেশী-ই থাকে। থাকে বলেই ছৈদিতে আজ আমরা পাশ্চাত্যের মাগী-মাতরানিদের নিতম্বের ছহীহ দোল দেখতে পাই। যেখানে সেদেশের অধিকাংশ মুসলমান এর বিরোধী সেখানে এধরনের অপসংস্কৃতি বিকাশের পথ তৈরী হয়েছে রাজতান্ত্রিক উচ্ছন্ন নীতির কারনে। ঐযে আমাদের বিশিষ্ট স্ট্রাটেজিস্ট আমেরিকান ছেক বলেছেন যে মাধ্যপ্রাচ্যের রাজারা ইসরায়েলের সাথে চুমা-চাটি করে তাকে ঘায়েল করবার ষষ্ঠমাত্রীয় খেলাধুলায় লিপ্ত আছেন। অনেকটা কাদিয়ানীদের লাভ বোমার মতো। লাভ ফর অল। হেট ফর নান। হেঁ হেঁ ...
সুতরাং গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর ও শাসন কার্য পরিচালনার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একে সম্মান দিতে হবে। বাংলাদেশে ক্ষমতা কেন্দ্রিক যে কোন কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হলে আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রদান করতে হবে। তবে শুধু প্রতিশ্রুতি প্রদানই যথেষ্ট নয়। দলীয় কর্মকান্ডে এর প্রতিফলনও ঘটাতে হবে। আউমিলিগের মতো যারা ইতিমধ্যে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে তাদের রাজনীতি চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সুযোগে ক্ষমতায় এসে এই পদ্ধতিকে রধ করে দেবার মধ্যে দিয়ে তারা যে জনদ্রোহীতা ও দেশদ্রোহীতার অপরাধ সংঘটন করেছে এর জন্য তাদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
এখানে এটাও পরিষ্কার করা দরকার যে সময়ের সাথে মানব সভ্যতাও সম্মুখগামী। পশ্চাদগামী নয়। রাজতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদী বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে আমরা যে জাতিরাষ্ট্র্য ভিত্তিক বাস্তবতায় এসে পৌঁছেছি তার ঐতিহাসিক কারন রয়েছে। সুতরাং জাতিরাষ্ট্র্য ভিত্তিক কাঠামো থেকে উদ্ভূত সমস্যার কারনে সাম্রাজবাদকে ফিরিয়ে আনা পশ্চাদমুখিতাই শুধু নয় বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যাত্ব-ও বটে! বর্তমানে তুর্কী সিনেমা দেখে অনেকের মধ্যে একধরনের ইতিহাস কাতরতা তৈরী হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে যদি শাহেনশাহ আওরঙ্গযীব 'আ-লামগীর কিংবা সুলতান সুলেইমান বর্তমানে জীবিত থাকতেন তাহলে বর্তমান রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমা পাড়ি দিয়েই, প্রক্রিয়া-পদ্ধতি রপ্ত করেই তাঁরা ক্ষমতাসীন হতেন। শুধু তা-ই নয় বরং বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া-পদ্ধতির উন্নতি ও উৎকর্ষও সাধন করতেন। সুতরাং আম্রিকা জয় করে সুলতান সুলেমান কিংবা শাহেনশাহ আওরঙ্গযীব গুরায় চড়ে, তলোয়ার নিয়ে হাঁকিয়ে বেড়াবার শিশুসুলভ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আশা উচিত। বরং এই চাক্ষুস্মান প্রজ্ঞা থাকা উচিত যেনো ফাতিহ মেহমেত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি, সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব দিয়ে জনমন জয় করে বিপুল ভোটে শুধু বিজয়ীই হচ্ছেনা না বরং বর্তমান এই বৈশ্বিক কাঠামোতেই বিশ্বব্যাপী নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হচ্ছেন।