ফ্যাক্ট চেকিং

ঈমানে একটা কথা কই। একজন সক্ষম পুরুষ হিসেবে উর্বশীদের উন্নত বক্ষ এবং একজন রসপন্ডিত অর্থাৎ কনাসার হিসেবে মধু - এই দুই জিনিস আমার একিলিস হিল। অর্থাৎ এই দুইয়ের দর্শনে আমার ঈমান নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। কিন্ত আশার কথা আমি ভ্যাকসিনেটেড। সেই কৈশোরে এহইয়া উলুমুদ্দীন পড়েছি। সুতরাং ঈমানের এই টানাপোড়েনে শেষমেষ ইবলিস আমার কাছে ধরা খেয়ে যায়। শোকর আল হামদ!
 
তবে আজ মনে হচ্ছে আমি ধরা খেয়ে গেলাম। ধরা খেয়েছি সুপারষ্টোরে গিয়ে। সুপারষ্টোর সাম্প্রতিক সময়ের এক বিভ্রান্তিকর চল। বিভ্রান্তিকর এজন্য যে একদিকে এই জিনিস নাগরিক জীবনকে স্বাচ্ছন্দমন্ডিত করে তোলে। অন্যদিকে তা ভোগবাদকে উস্কে দেয়। ঐ যে পাশ্চাত্যে বিলবোর্ডের সেই বিজ্ঞাপন, 'শপ আনটিল ইউ ড্রপ'। অর্থাৎ শপিং করতে করতে মারা খা! স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা পন্য গুলো লাক্স সুন্দরীদের চেয়েও আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বলে, ‘টেক মি’।
 
আমিও নিয়ে নিলাম। না পাঠক, ভেটকিয়ে লাভ নেই। আমি কোন উর্বশীর উন্নত বক্ষের কথা বলছি না। আমি বলছি মধুর কথা। কারকুমা মধু। এখানেই গোল বেধেছে। তবে এক্ষণে একটা স্বীকারোক্তি না দিলে নয়। আমি যতোই ছৈদি-ছালাফির বিরোধীতা করি না কেন তলে তলে আমি আল-শিফা মধুর পুরনো খদ্দের। শুনেছিলাম সেই মধু মুলত আসে ইয়েমেনের গহীন মরুদ্যানের বিরল প্রজাতির বুনো ফুল থেকে। তাছাড়া ইয়েমেনিদের মধু চাষের ঐতিহ্য বহু পুরনো বলে জানি।
 
সে যা-ই হোক। নতুন মধু দেখলে আমি চেখে দেখি। তাছাড়া আওমী আমলে পয়দা হওয়া লিপস্টিক ময়লানা, নর্তক ময়লানা, মোটিভেশনাল অর্থাৎ উত্তেজক ময়লানা প্রভৃতি নানা প্রকার নাটুয়া ময়লানাদের বরাতে আমরা মাছনা-ছালাছা-আরবাদের ফযীলত সম্পর্কে ওয়াকেবহাল হয়েছি। সুতরাং এই মডার্ণ যুগে এসে ওয়াহিদা নিয়ে পড়ে থাকে কোন বেকুবে? তবে দু:খের কথা কি আমার নতুন সংসারগুলো টেকেনি। মাছনা-ছালাছা-আরবা ছাড়িয়ে খামছায় এসে খামছি খেয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে কারকুমা আমাকে খামছে দিয়েছে।
 
ঠিক কারকুমা নয়, তোমাদের কিটো ইমাম জাহাঙ্গীর কবির। পাঠক, কিটো মহোদয় কারকুমার পক্ষে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন দেখেই মনে খচখচ শুরু হলো। এর আগ পর্যন্ত ভালোই ছিলাম। কারন পন্যের লেবেলের গায়ে লেখা ছিলো ৭০০ প্রজাতির ফুলের নির্যাস থেকে নেয়া ব্যতিক্রমী এই মধু।
 

 
তবে লেবেলের লেখা আমি বিশ্বাস করি ব্যাপারটি এমন নয়। তাছাড়া পুঁজিবাদী বিশ্বে ভাষা তার স্বাভাবিক অর্থ হারিয়েছে। এখন নেচার মানে প্রকৃতি না-ও হতে পারে। বরং হতে পারে কোন রেজিস্টার্ড ট্রেড মার্ক। পন্যের লেবেলে যে সৌত্তর ফন্ট সাইজে বড়ো করে লেখা তা আবারও ভালো করে পড়ে দেখো। ‘নেচার’-এর উপরে ছোটকরে অর্থাৎ সুপারস্ক্রীপ্টে টিএম লেখা আছে? তাহলে এটা ট্রেডমার্ক। ওরে শাখামৃগ! এই যে সেদিন মুরুব্বীর নিষেধ স্বত্তেও নেচার লেখা বলকারকের বড়ি খেয়ে আজ সারাটা দিন আমাশয় নিয়ে টাট্টিখানায় বসে আছিস এখন বুঝতে পারছিস? সে যাক। তুই থাক বসে। আমি কীটের কাছে থুক্কু কিটো মিঞাঁর কাছে ফিরে যাই।
 
যথারীতি বাঙ্গলামি করে উনি হাল-ফ্যাশনের যতো চটকদার শব্দ, শব্দগুচ্ছ আছে সেগুলো আওড়াতে থাকলেন। পাঠক, বুঝতে পারছতো? অর্গানিক, জিএমপি, আইএসও, এফডিএ, সার্টিফাইড, কেমিক্যালমুক্ত, এডিটিভমুক্ত, প্যাসটিউর-রেইজড অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভবে বেড়ে ওঠা-পালিত, জিএমওমুক্ত অর্থাৎ জেনেটিক্যালি মডিফায়েড নয় ইত্যাদি।
 

উনি যতোই এগুলো বলেন আমার ভ্রু ততোই কুঁচকে যায়। সন্দেহ যায় বেড়ে। অনলাইন অনুসন্ধান চলে ঝড়ের গতিতে। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য, সন্দেহকে কখনও ঘনীভূত, কখনও দূরীভূত করে। এফডিএ রেজিস্ট্রেশন যদি শুধু যুুক্তরাষ্ট্র্যের কোম্পানীর জন্য হয়, তাহলে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানী কি করে এর অন্তর্ভূক্ত বলে দাবী করতে পারে?
 
 
IFOAM যদি স্বনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তাহলে নিজের ঢোল পেটাতে অর্থ খরচের প্রয়োজনটা কি তাদের?
 
 
তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে আওমীপতিরা সংখ্যাধিক্য কিংবা উঁচু পদে অধিষ্ঠিত সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার অজান্তে সংশয় চলে আসে।
 
 
আরও কথা হলো, তদের মধু যদি এতোই ভালো হয় তাহলে এ্যামাজনে তাদের পন্যের রেটিং এর এমন গরীবি হালত কেন? অবশ্য এ্যামাজন রেটিং কতোটুকু বিশ্বাস করা যায় সে-ও কথা। এ্যামজন রেটিং বুস্ট করার জন্য, কাস্টমার রিভিউ দেবার জন্য রাতারাতি বহু চাইনিজ কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
 


 
অন্যদিকে মেলো আফ্রিকা সত্যিই মধুচাষের সাথে জড়িত দেখে এবং তাদের সাথে কর্মরত দাঁড়িঅলা, টুপিঅলা ভাই-বেরাদার দেখে আমার বাংলা মন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে ওঠে। আমি আবেগস্নাত হয়ে যাই।
 

 
কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে বিখ্যাত দিয়ারাবি গানের ডুয়ো গায়ক আলী ফারকা ত্রাওরে ও আবু বকর ত্রাওরের কথা। কি সন্দর কইরা মাতাত টুফী পিন্দা শইলে লামবা একখান আলখেল্লা ঝুলাইয়া টুংটুং কইরা ছ্যাঁকা খাওয়ার গীত ধরছিলেন। তারউপ্রে ধর্মে আছিলেন খিরিশটান। কিএক্টাবাংলাবস্থা! তারওপর সাদা চামড়ার মানুষ কাইলা গুলারে উদ্ধার করে ফাটিয়ে ফেলছে দেখলেই আমার চোখ সরু হয়ে যায়। ইচ্ছে করে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কিরে ঘটনা কি? ঈমানে ক! কিরিয়া কাট!
 
এ্যার মইদ্যে অনুসন্ধান সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক তথ্য আমার পৌরুষত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। এ ব্যাটা আর দশটা বাংলার মতো আমাকে কলিকাতা হারবালের খদ্দের মনে করে নাকি? এ্যাঁ!
 
 
আমার বাংলা মন এই চতুর্মুখি দ্বন্দে পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে যায়। ফলত: সে হয়ে ওঠে সইল্যাটার মতো ধার্ষনিক। কি দরকার ছিলো এই ঘ্যান চর্চার? কতো শখ করে এনেছিলুম। খরিদ করেছিলুম। এমনকি চেখে দেখার পর স্বাদটাও মন্দ ঠেকেনি। অনেকটা ঝোলা গুড়ের মতো। বাদ সেধেছে এই অনলাইন তথ্যানুসন্ধান। দু:খিত বিনাভোটের সরকার মহোদয়। ফ্যাক্ট চেকিং এর গুষ্ঠী কিলাই।

Popular posts from this blog

আসেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাজাই

ইসলাম ও গণতন্ত্র

জামাতের ভোট: একবারে না পারিলে দাও শতবার