জাত বাংলা এবং কুত্তার জাত

যখন ছোট ছিলাম একটা কথা প্রায়ই শুনতাম যে, কুকুর যে রাস্তা দিয়ে যায় ঐ রাস্তা চল্লিশ দিন পর্যন্ত নাপাক থাকে। এরপর থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তাআলা স্বল্প-বিস্তর দ্বীনি এলেম তালাশ করবার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এ জাতীয় কথা বা ধ্যান ধারনা ইসলামী কোন সাহিত্য-সভ্যতায় খুঁজে পাইনি।

বরঞ্চ এ কথা জানা যায় যে মিশরে কায়রোতে এক সময় লক্ষাধিক কুকুর ছিলো। যেগুলো অধিকাংশ স্থানীয়দের দ্বারা প্রশিক্ষিত ছিলো। তাদের কাজ ছিলো স্থানীয় এলাকা পাহারা দেয়া। অনাহুত আগুন্তক সম্পর্কে মহল্লাবাসীকে সজাগ করা। এলাকার ময়লা খেয়ে পরিষ্কার করা।

কিন্তু "মহামতি" নেপোলিয়ানের সৈন্যবাহিনী মিশর দখলের পর অনাহুত আগুন্তক হিসেবে কুকুরদের আক্রমণের শিকার হতো হর হামেশা। এজন্য তার সময়ে মিশরে আলিমদের সাথে সাথে ব্যাপক হারে কুকুর হত্যা করা হতো। হাল আমলে কুকুর প্রেমী হয়ে ওঠা পাশ্চাত্যিয়রা এ ব্যাপারটা চেপে গিয়েছে।

সে যাই হোক, আমি লক্ষ্য করেছি জাত বাংলার অজাত স্বভাবের একটা হলো আচরণগত অস্বাভাবিকত্ব। এক দিকে এমন লোক ঢের যে কুকুরকে খামোখা ঢিল ছুঁড়ে ত্যক্ত করছে, কেউ কেউ কুকুরের গায়ে গরম পানি পর্যন্ত ঢেলে দিয়ে তার চামড়া ঝলসে দিচ্ছে, পাড়ার বিটলা ছেলেদের লেলিয়ে দিচ্ছে তাদের পৈশাচিক আনন্দের খোরাক হিসেবে, আবার অন্যদিকে হঠাৎ ধনী হয়ে ওঠা পরিবারের আবাল ছেলে-মেয়েদের বিলাতী ঢং এর বাহন হয়ে উঠছে। তারা বাসার ড্রইং রুমে, নিজের বিছানায়, এমনকি নিজের কোলে কুকুর নিয়ে আহলাদেপনায় মেতে উঠছে। বাড়ীর কাজের মেয়েটি, ড্রাইভারটি, কিংবা দারোয়ানটি কি খাচ্ছে সেদিকে খেয়াল না থাকুক, কুকুরের জন্য বাইরে থেকে খানা নিয়ে আসা হচ্ছে। অর্থাৎ নিজেদের উচ্ছিষ্ট-টুকুও কুকুরের খানা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত নকল কৃত্রিম খাবার। এসব খাবার খেয়ে কুকুর-বিড়ালগুলোও হাতী হয়ে উঠছে।

ইসলামী শরীয়তে মাযহাব ভেদে কুকুরের লালা, গায়ের ঘাম, পশম ইত্যাদি নাপাক বলে বিবেচিত। অর্থাৎ অযু করা অবস্থায় এসবের কোনটার সংস্পর্শে আসলে আবার অযু করা লাগবে।

এখন মুল কথায় আসি। ইদানীং মসজিদের আশেপাশে এমনকি ভেতরেও কুকুরের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। এবং এই নিয়ে সাধারন মানুষ দুরে থাক মসজিদ কিংবা মাদ্রারাসা সংশ্লিষ্ট লোকদের মধ্যেও কোন বিকার দেখতে পাইনি। একবার এক জায়গায় জুম্মা পড়লাম। জুম্মার ভেতর কি অবলীলায় নামাযের সামনে দিয়ে কুকুর ঘোরাফেরা করল এবং মুসল্লীরাও কেউ গা করলো না এটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। বাসায় এসে এই সম্পর্কিত শরীয়তের হুকুম নিয়ে কিছু ঘাঁটাঘাটি করেছিলাম।

আসল ব্যাপারটা হলো বিগত আটশ বছরেও যে জাত-বাংলা প্রতি জুমায় কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবার ব্যাপারে কিংবা নামাযীদের জুতোর সংস্থান কিভাবে হবে তা নিয়ে একটা সামাজিক ঐক্যমত্যে আসতে পারেনি তার থেকে কাজের কিছু আশা করাটা নিছক আত্ম-প্রতারণা।

তবে আজ নামায শেষে একজন বয়স্ক মুরব্বী এ নিয়ে অভিযোগ জানালেন। মসজিদে বয়স্ক দেখলে আমার ভীষণ গোস্বা হয়। কারন কৈশরে যখন মসজিদে নিয়মিত হবার চেষ্টা করছিলাম আমার কাছে মনে হত বুইড়া গুলো এটা মেনে নিতে পারতো না। আচার আচরনে মনে হতো গজগজ করছে। বাংলাতে এক বলে "হোগানো"। অর্থাৎ নিজে ধর্ম বিমুখতায়, ধর্মোদ্রোহে দিন কাটিয়েছি। এখন শিশুকাল থেকেই একজন ধর্মানুরক্ত হয়ে পড়বে এটা অনেক হারামখোর বুইড়া জাত-বাংলার হজম করতে কষ্ট হয়। অন্যত্র কথোপকথনে জানতে পারি যে এই সকল লোকের মতে এই বয়সে ছেলে-মেয়েরা "পারলে-ঠেকা" করে বেড়াবে। এই বয়সে মুর্দাদের মতো নামাজ-রোজা করা শুরু করলে বুইড়া কালে কি করবে? জাত-বাংলার এই ধার্ষনিকতা সার্বজনীন।

আমি লক্ষ্য করেছি মসজিদের বুইড়া খাটাশ গুলো বাচ্চাদের উপস্থিতির ব্যাপারে অত্যন্ত অনীহ। তাদের মতে মসজিদ নামায পড়ার জায়গা। জাত-বাংলার অভিনব পীর শাপ শিখিয়ে দিয়েছেন যে নামায হলো মেডিটেশন। অর্থাৎ "আত্ম"-নিমগ্নতা। বাচ্চারা এতে প্রধান বাধা। তবে একথাও সত্য অনেকেই পয়দা দিয়ে খালাস হয়ে যান। সন্তানদের নূন্যতম সামাজিকতা, শিষ্টাচারটুকু শেখান না। অবশ্য নিজে জানলেই না শেখানোর প্রশ্ন।

যাহোক বুইড়াদের ব্যাপারে আমার এই তিক্ত অভিজ্ঞতা স্বত্তেও আজকের এই মুরুব্বীর কথা সমর্থন না করে পারা যায়না। বরং আমি যা যেচে বলিনি কিন্তু বলা উচিত ছিলো সেটা উনি বলায় তাঁর প্রতি মনের থেকে শ্রদ্ধাবোধও তৈরী হয়েছে। যদিও জানি তাতে কিছুই হবে না। এদেশের সব কিছুই একটা উদ্দেশ্যহীন ক্ষণিকের আলোড়ন মাত্র। এর কোন ফলাফল নেই। এটাই জাত-বাংলাদের কর্ম প্রক্রিয়া। এটাই তাদের অভিশপ্ত জীবনের প্রকাশ।

পুনশ্চ

জামাত সম্পর্কিত কিছু বিধানের ব্যাপারে সাধারণ মুসল্লীদের বিভ্রান্তি ব্যাপক। আমি আমার স্বল্প পড়াশোনায় হানাফি মতে নিচের কিছু মাসলাহা তুলে ধরলাম। আপনারা স্থানীয় আলিমদের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন:

১) নামাজী ব্যক্তির সুতরা সিজদার জায়গা ছাড়িয়ে এক বিঘত থেকে এক হাত পর্যন্ত। অর্থাৎ এই দুরত্বের বাইরে হলে নামাজী ব্যক্তির সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে শরীয়তে বাধা নাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো লোকের যাতায়াত বিঘ্ন হয় এমন জায়গায় নামাজ পড়ার আকল হয় কি করে? শেষ রাকাতে এসে জামাত ধরা ভিন্ন কথা। কিন্তু সুন্নত-নফল ইত্যাদি রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পড়া ধার্মিকতা না আহমকি?

২) জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে ইমামের সুতরা মুক্তাদিদের সুতরা বলে গন্য। অর্থাৎ জামাত শুরু হয়ে গেলে যদি দেখেন কোন কাতারে জায়গা ফাঁকা আপনি কাতারের মাঝে নামাজিদের সামনে দিয়ে হেঁটে ঐ স্থানে গিয়ে কাতারবদ্ধ হওয়া শরীয়তে জায়েজ শুধু নয়, অনেকের মতে শূন্যস্থান পূরন বাধ্যবাধকতা।

৩) জামাতবদ্ধ হবার সময় জুতো বা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখবার জন্য দুই কাতারের মাঝে জায়গা রাখা জায়েজ। অর্থাৎ জাত-বাংলার মতো একটার পোঁদে আরেকটা মুখ দিয়ে দাঁড়াবার কোন আবশ্যকতা শরীয়তে নাই। অনেক দেশের বড়ো মসজিদগুলোতে মুসল্লীরা সাথে করে পলিথিন রাখেন বা মসজিদ থেকে দানও করা হয়। জামাতে দাঁড়াবার সময় পলিথিনে জুতো ঢুকিয়ে দুই হাঁঠুর মাঝে বা পাশে রেখে দেন।

Popular posts from this blog

আসেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাজাই

ইসলাম ও গণতন্ত্র

জামাতের ভোট: একবারে না পারিলে দাও শতবার