অনুকরণ বনাম অনুসরণ

অনুকরণ আর অনুসরণ এক নয়। অনুকরণ বাঁদরের কাজ। কেবল আদর্শনীয় আদম সন্তানেরাই অনুসরণীয় হবার স্বীকৃতি লাভ করেন। অনুসারি ও অনুকরণকারীর পার্থক্য হলো বিচারবোধে। অনুকরণকারীর কোন বিচারবোধ নাই। সে যাই দেখে তাই করে। অনুসারিগণ বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করেন। ব্যক্তিবিশেষের খামখেয়ালীপনা বাদ দিয়ে তাঁদের মূলনীতি, বিশ্বাস, ও আদর্শের উপলব্ধির প্রচেষ্টা ও এসবের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁকে ধারণ করবার চেষ্টা করেন।

অনুকরণের দৃষ্টান্ত এই যে, যেহেতু ম্যাক্মিম গোর্কি "মা" - উপন্যাস লিখেছিলেন, তাই একটা জতা-বাংলা লিখবে - "ম্যাঁও"। কারন তার ধারণা এই ছাড়া উপন্যাসিক হওয়া সম্ভব নয়।

আমাদের এক bum-পন্থী শিক্ষক একবার বলেছিলেন, ম্যাক্মিম গোর্কি তার "মা" - উপন্যাসে লিখেছিলেন যে তার মা ছিলেন মাদী ঘোড়ার মতো। তোমরা কখনই ম্যাক্মিম গোর্কি হতে পারবেনা কারন তোমরা কখনই এই কথা লেখার "সাহস" করবে না।

ফুলার রোডের কাবিলটা যখন নিজেকে বুদ্ধিজীবি প্রমাণ করবার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় নিজের ভেতরের সব আবর্জনা উগরে দিচ্ছিলো আমি তখন ভাবছিলাম যদি বেশ্যার ঘরে জন্ম নেয়ার পরীক্ষা মহান আল্লাহ কোন মুসলমানের নিয়ে থাকেন এবং ঐ পরিবেশে জন্ম দিয়েও তাকে দ্বীনের হেদায়াতের পথ দেখাতেন তাহলে সে এই পবিত্র দ্বীনের শিক্ষার তাড়নাতেই কখনই নিজের মায়ের অপমান হয় এমন কাজ করবে না। এটাই ইসলামের শিক্ষা।

তকদিরকে হাসিমুখে মেনে নেয়া ইসলামের এক অনন্য শিক্ষা। যদি তা খারাপ কিছুও হয়। একজন মুসলমান অবলীলায় তা মেনে নেয়। এ কারনেই জেঙ্গিস খানের এক প্রতাপশালী বংশধর যখন একজন আলিমের সামনে পড়লেন মুসলিমদের প্রতি প্রবল ঘৃণা তাড়িত হয়ে তিনি ঐ আলিমকে জিজ্ঞেস করলেন, "কার জীবনের মূল্য বেশী? আমার এই কুকুরটার, তা তোমার?"। উনি জবাবে বলেছিলেন, যদি আমার জীবন মহান আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতায় ব্যয়িত হয় তবে ঐ কুকুর-ই শ্রেষ্ঠ। আর যদি তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়িত হয় তবে আমি-ই শ্রেষ্ঠ। ঐ আলিমের নাম ভুলে গিয়েছি কিন্তু তাতারী সেনাপতিটি খুব সম্ভবত জেঙ্গিসের নাতী বেরকে খান। ঐ আলিমের এমন গভীর কিন্তু দ্ব্যর্থহীন জবাব বেরকে খানকে এমনই মুগ্ধ করেছিলো যে তিনি ঐ আলিমকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁর সিংহাসনে আরোহনের পর যেন ঐ আলিম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

সুতরাং বেশ্যার ঘরে জন্ম নেয়া এক আল্লাহ ভীরু মুসলমান ঢোল পিটিয়ে একথা জানান দেবে না যে বেশ্যার ঘরে তার জন্ম। বরং মহান আল্লাহর কাছে তার পিতা কিংবা মাতার শুদ্ধির জন্য, হেদায়েতের জন্য, গুনাহ মাফির জন্য দোয়া করবে এবং তার সাধ্য মতো অন্যায়ে বাধা দেবার চেষ্টা করবে।

যেমনটা আমরা দেখি নবীগণের ক্ষেত্রে। ইব্রাহীম আ: তাঁর কাফির পিতার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়ায় ক্ষান্ত দেননি যতোক্ষণ পর্যন্ত তাঁর পরিণতি সম্পর্কে ওনাকে ঐশী বাণীতে অবহিত করা হয়নি।

একারনেই আমরা নবী মোহাম্মদ সা: এঁর আনুসারি। অপরপক্ষে তাগুতের তল্পিবাহকেরা সব অন্ধ অনুকরণে দিশেহারা।

Popular posts from this blog

আসেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাজাই

ইসলাম ও গণতন্ত্র

জামাতের ভোট: একবারে না পারিলে দাও শতবার