মগ ও বদনার যুদ্ধ

দেশে মগের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। এর বিপরীতে বদনার ব্যবহার কমছে। অথচ বদনা দিয়ে যতো অনায়াসে সুনির্দিষ্ট স্থানে পানি ঢালা যায় মগ দিয়ে তা যায় না। তাতে কিছু যায় আসে না। এখন দেশ "স্বাধীন" হয়েছে। বর্গীর দেশের লোকেরা এখন কখনও আমাদের বন্ধু, কখনও স্বামী দেশ হিসেবে বিবেচিত।

"স্বাধীন" হবার পূর্বে বর্গীদের সাথে জান বাজী রেখে বাংলার মানুষ লড়াই করতো। কারন একেতো দেশের মানুষ সব ঘাউড়া যবন। এক আল্লাহ ছাড়া কারও বন্দেগীতে তার চরম অস্বীকৃতি। তদুপরি বর্গী কর্তৃক লুন্ঠনের বিষয়তো আছেই। তাই "স্বাধীন" হবার পরেও দেশের অবস্থা দেখে বাংলার গীতিকারেরা যখন বিস্ময়ভরে লিখেছিলেন,

বর্গীরা আর দেয় না হানা, নেইকো জমিদার।

তবু কেনো এদেশ জুড়ে নিত্য হাহাকার?

তখন আমরাও তার বিস্ময়ে শামিল হই, বেদনা উপলব্ধি করি।

তাই বলে হাহাকার থেমে নেই। এখন চলছে ডিমের হাহাকার। ডিমের হাহাকার ঠেকাতে বর্গীর দেশ থেকে ডিম আনা হবে। তাতে বরং হাহাকার আরও বেড়ে গিয়েছে। বর্গীর ডিমের হানায় দেশীয় ডিম অক্কা পাবে এ চিন্তায় হাহাকার। যদিও অক্কা পাওয়া এখন একটা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। সয়ে গেছে। শুধু সংখ্যাটা উল্লেখ করলেই সহ্য করা কঠিন হয়ে যায়। তাছাড়া অপদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র মতে, হত্যার ঘটনায় সংখ্যার হিসেব করলে, তার সত্যতা যাচাই করা হত্যাকারীর ওপর ফরয হয়ে যায়।

দেশের ওপর হামলা শুধু যে বর্গী ও তাদের এদেশীয় পয়দারা করছে তা নয়। মগের মুল্লুক-ও তাতে যোগ দিয়েছে। মগের দেশের শতবর্ষী পুরনো অধিবাসীদের এদেশীয় তকমা দিয়ে খেদিয়ে দিয়েছে। অথচ রোহিঙ্গাদের প্রতিরক্ষায় উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিয়ে আমরা গান্ধীর মতো অহিংস পন্থা অবলম্বন করেছি। মগের ব্যবহার বাড়িয়ে চলেছি।

তবে সমস্যা বহুমাত্রিক। বদনার সাথে শৌচকর্মের সংযোগ দেশীয়দের মানসপটে দৃঢ়ভাবে এঁটে গিয়েছে। বদনার আকৃতি যতোই উপযুক্ত হোক, তা যতোই অন্যত্র ব্যবহারযোগ্য হোক, তার স্থান শৌচাগারে। কবির ভাষায়,

বন্যেরা বনে সুন্দর, বদনা শৌচাগারে।

বিশ্বসভ্যতায় যদিও বদনার ব্যবহার প্রবল। এর প্রচলনও এদেশের মতোই ঐতিহ্যবাহী ও পুরোনা। তুরস্কে, পারস্যে, আরবে দাল্লার ব্যবহার এখনও বহুল। দাল্লা খুব সম্ভবত বদনার চাচাতো কিংবা মামাতো ভাই। মিল আছে তবে হুবহু এক নয়। দাল্লা পানীয় সরবরাহে ব্যবহৃত হয়। তবে তা শৌচকর্মের পানি নয়। চা-কফি-শরবত ইত্যাদি পানীয়।

আমার মাঝে মাঝে মন চায় দেশের সম্ভ্রান্ত নটি-ব্যক্তিত্বদের আমন্ত্রণ করি। যারা নিজেদের সন্তানদের বিলাতী স্কুলে পড়িয়ে দেশের মানুষকে দেশপ্রেম-ভাষাপ্রেমের সবক দেন, দেশের আওরতদের গায়রতী বেড়ে যাচ্ছে দেখে যারা হাপিত্যেশ করেন, দেশে রুচীর দুর্ভিক্ষ দেখা গিয়েছে বলে চন্ডীদাসীয় বিলাপ জুড়ে দেন, - মন চায় তাদের ডাইনিং টেবিলে বদনা দিয়ে আপ্যায়ন করি। এটা যে হাজার বছরের ঐতিহ্য এতো তো কোন সন্দেহ নেই?

আমার যবন মনে যখন মগ ও বদনার, বিদেশী ও স্বদেশীদের, তাগুত ও ঈমানের এই লড়াই চলছে, সেই সময় মনে হলো যদি অলৌকিকভাবে কম্পিউটার বিজ্ঞানে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ শান্তিতে একটা নোবেল পুরষ্কার পেয়ে যাই তখন চিন্তার সাধারণ এই সূত্রগুলো রাতারাতি পাল্টে যাবে। বিগড়ে যাওয়া, ভড়কে দেওয়া পত্রিকাগুলো হাল চালে কয়েক রঙ্গের পারিসাংখ্যিক চার্টে আমার কৃতিত্ব তুলে ধরবে। মানবজমিন সেনসেশনাল রিপোর্ট করবে, 'কি হচ্ছে, কি হবে?' দেশের অবহেলিত, মিসকীন জনগোষ্ঠীর জাতে ওঠার যে তীব্র আকাঙ্খা তাকে পুঁজি করে ভুতের গল্প লেখা বিজ্ঞানীরা, গণিত শিখে স্বপ্ন দেখানোর ফেরীওয়ালারা কিতাব লিখবেন "একটুখানি স্বপ্ন", এরপরের বই "আরও একটু স্বপ্ন"।

এইসব চিন্তায় যখন কাতর তখন কোত্থেকে ঠাকুরপো এসে আমার যবন মনে ভর করে অশুচি করে দিলেন:

আজি হতে শতবর্ষ পরে ...

কে তুমি কিনিছ বিলিয়ন ডলারে আমার বদনাখানি?

এক্ষণে আমার ব্রাক্ষণ মন তাড়া দিচ্ছে আবারও অযু করবার। হালের সহি তরীকা তাই বলে। কি আর করা?

মগ নিপাত যাক। বদনায়ই সই। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

Popular posts from this blog

আসেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাজাই

ইসলাম ও গণতন্ত্র

জামাতের ভোট: একবারে না পারিলে দাও শতবার