পশুদের মানুষ ও মানুষের পশুর মতো আচরণ

যেদিন থেকে তুর্কি কাংগাল কুকুর সম্পর্কে জানতে পারি সেদিন থেকে আমি তাদের গুণগ্রাহী হয়ে উঠি। এরা বেশ শান্ত ও স্থৈর্য প্রকৃতির। স্বল্পে ত্যক্ত হয় না। এজন্য শিশুদের প্রহরা বা যত্নেও এদের ব্যবহার আছে:

তবে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে অনেক শিশু গৃহপালিত কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ করে। কারন সকল কুকুর সকল কাজের উপযুক্ত নয়। যেমন বুলডগ, রটওয়াইলার, ডবারমেন, পিটবুল এগুলো প্রকৃতিগত ভাবেই রগচটা, হিংস্র।

কুকুর ক্ষুরধার নখর ও দন্তযুক্ত একটি শক্তিশালী প্রাণী। এদের নিকট থাকা নিরাপদ নয়। খুব সম্ভবত এ কারনেই এদের গৃহে স্থান দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। তবে শিকারের প্রয়োজনে এদের ব্যবহার জায়েজ। এটাই ওদের মুল দক্ষতা বা উপযোগীতা।

তুর্কি কাংগাল পরিস্থিতির প্রয়োজনে বেশ ক্ষিপ্র ও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। এজন্য মেষ পালক হিসেবে তাদের ব্যবহার প্রচুর। তুর্কিতে নেকড়ে-শিয়াল ইত্যাদির উপদ্রব বেশী। তাদের থেকে গবাদি পশু রক্ষার জন্য কাংগালের ব্যবহার ঢের। অনেক সময় কয়েকটা কাংগাল মিলে নেকড়ের পাল, কিংবা ভাল্লুক এমনকি সিংহকে পর্যন্ত তাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে।

দেশী নেড়ী কুত্তার সাথে তুর্কি কাংগালের একটা বড়ো পার্থক্য হলো, নেড়ী কুত্তা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘেউ-ঘেউ করতেই থাকে। স্বল্পে ত্যক্ত হয়ে যায়। কিন্তু লড়াই শুরু হলে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর কোন চিপায় গিয়ে মুতে দেয়। কিন্তু তুর্কি কাংগাল বেশ শান্ত, নিশ্চুপ প্রকৃতির। তথাপি লড়াইয়ে এদের জুড়ি নাই।

দেশের মানুষের প্রকৃতিও দেশী নেড়ী কুত্তার মতো। ভাষণে প্রবল। তবে লড়াই শুরু হলে পালিয়ে যায়। কিন্তু আমার ভাবনা কুকুরে-মানুষের প্রকৃতিতে এই মিলটা হতে পারলো কি করে? এটা কি স্থানীয় প্রকৃতির প্রভাব? কারন এটা যদি সমাজ-সংগঠন-সংস্কৃতি জনিত ব্যাপার হতো তাহলে কুকুরের ওপরেতো এর প্রভাব পড়তো না। নাকি এই এলাকার প্রানীদের মানসিক-শারীরিক গঠন প্রকৃতি-ই এমন?

দেশীয় পুরুষদের লিঙ্গ খর্বকায়, দৈহিক মিলনের স্থিতিকালও কম কিন্তু চুলকানি বেশী। একারনে যাদের এক স্ত্রী সামলানোর মতো শারীরিক, অর্থনৈতিক যোগ্যতা নাই তারা একাধিক স্ত্রী গমনের দিবাস্বপ্নে বিভোর থাকে। যার ধ্বজভঙ্গ সে হেরেম পালার খাব দেখে। দেশী কুত্তার মতোই। চিল্লায় বেশী, কামড়ায় কম।

আমার মরহুম নানাজানের প্রিয় পশু ছিলো হাতি। ওনার প্রায় সব গল্পে হাতি থাকতো। আমি যখন আমার স্কুলের সহপাঠীদের তা বললাম ওরা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা শুরু করলো। এটাই স্বাভাবিক। কারন মানুষের প্রিয় পশু হতে হয় বাঘ-সিংহ। অন্তত নপুংশক-ভোঁদড় বাঙ্গালীকে এটাই শেখানো হয়েছে। খুব সম্ভবত তাদের পৌরষত্বের অভাব মোচনের একটা পন্থা।

পরবর্তীতে ভেবে দেখলাম হাতি একটা অসাধারন প্রাণী। বেশ নিরীহ প্রকৃতির। প্রবল স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তাদের মাঝে হাস্যরস ও অতীন্দ্রিয় বুদ্ধিমত্তা (Emotional Intelligence) পরিলক্ষিত হয়:

তথাপি প্রয়োজনে তারা বাঘ-সিংহকেও কাবু করে ফেলতে পারে:

প্রায়শ ইন্টারনেটে দেখি পশুদের নিয়ে বাঙ্গালী ঘরানার কাতুকুতু প্রবণ ভিডিও। সস্তা হাস্যরস ও বেকুবী চিন্তা যেখানে স্পষ্ট। তখন উপলব্ধি করি মানুষের গাধামি একটা বৈশ্বিক ঘটনা। গাধামির মাত্রা ও প্রচলনটা এই দেশে অনেক বেশী। পার্থক্য এটাই। তো ঔসব ভিডিওতে বাঘ-সিংহের লড়াই, কে কার চেয়ে শক্তিশালী বেশি তা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়।

আসলে আল্লাহর একটা সৃষ্টি কৌশল হচ্ছে তিনি প্রত্যেক জীবের টিকে থাকবার জন্য যে যোগ্যতা থাকা দরকার তা তিনি শিখিয়ে দেন। একারনে প্রয়োজনে একটা বিড়ালও তার চাইতে বহুগুন শক্তিমত্তার অধিকারী একটা কুকুরকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম:

বাংলাদেশের অভিজাত এলাকাগুলোতে প্রায়-ই কিছু মানুষকে দেখা যায় কুকুর নিয়ে আদিখ্যেতা করতে। দেখা যায় কুকুরকে কোলে নিয়ে চুমু খাচ্ছে, ন্যাকামি করছে। অথচ একটা মা কুকুর তার সন্তান নিয়ে এমন ন্যাকামি করছে এটা কোন কালে কে দেখেছে? পরিচর্যা করা আর ন্যাকামো তো এক জিনিস নয়।

অনেকে দেখা যায় জর্মন শেফার্ডের মতো বিশালাকার কুকুর পালেন। অর্থাৎ খাঁচায় বন্দী করে রাখেন। এই জাতীয় কুকুরদের জন্য এটা একটা অভিশাপ বিশেষ। কারন কুকুর মাত্রই চরিয়ে বেড়াতে পছন্দ করে। এটাই তাদের প্রকৃতি। তার ওপর বড়ো শিকারী কুকুর গুলোর ক্ষেত্রে এটা অধিকতর সত্য। কিছু প্রজাতির কুকুর আছে যারা সামাজিকতা প্রিয়। তাদের বাসা বাড়িতে বন্দী করে রাখা এবং তাদের সময় না দেয়া অর্থাৎ তাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, হাঁটাহাঁটা করা না হলে এরা মুষঢ়ে পড়ে। বিষন্নতায় ভোগে।

কিন্তু যে দেশে মানুষের মুল্য নাই, যে দেশে কীট-পতঙ্গের মতো মানুষের পয়দা হয়, যাদের জীবন যাপন হয় মানবেতর অর্থাৎ মানুষ কিন্তু ইতরের মতো বসবাস, প্রকৃতির দিকে খেয়াল দেয়ার ফুসরতটা তাদের কই? আর যাদের সেই ফুসরত আছে তাদেরতো সেই রুচি নাই। কারন রুচি তৈরী হবার জন্যও তো একটা সময়, একটা পরিবেশ লাগে। পাশ্চাত্যীয়দের নিকট লুঙ্গি-পেটিকোট বেচে যারা বান্দীর পুত থেকে রাতারাতি শিল্পপতি বনে গেছে, বা ভুমিখোর শিল্পপতি, সরকারী ঘুষখোর, ব্যাংকের সুদখোর, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরুপি বাটপার, এদের সেই শিক্ষা, রুচি, অভিলাস কি করে হতে পারে? রুচি বা আভিজাত্যের নামে যতোটুকুই এদের মধ্যে দেখা যায় তাহলো বাঁদরের মতো ভিন দেশীদের, বিজাতীয়দের কৃষ্টি-কালচারের অনুকরণ।

সে যাই হোক, আজ হঠাৎ এই ভিডিওটা চোখে পড়ায় এতো কথা বললাম:

পরাধীনতার বিরুদ্ধে এমন চূড়ান্ত লড়াই করবার দৃশ্য প্রাণ-সঞ্চারক। এটা দেখে আমার মনে অনেক ভাবের উদয় হলো। মনে হলো যে একটা প্রায় নির্বোধ প্রাণীর স্বাধীনতার প্রতি যে অঙ্গীকার, পরাধীনতার বিরুদ্ধে যে প্রাণপণ লড়াই করবার প্রচেষ্টা অনেক মানুষের মধ্যেও তা পরিলক্ষিত হয় না। কিছু মানুষ মনে হয় যেনো তাগুত ও তার চেলাদের গোলামী করবার জন্যই পয়দা হয়েছে।

তবে এ যাবৎ কুকুরের ওপর, বিশেষ করে তুর্কি কাংগালের ওপর যতো বিশ্লেষণ দেখেছি তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র্যের এই ব্যক্তির পর্যবেক্ষণ সবচেয়ে ভালো লেগেছে ওনার পর্যবেক্ষণ শক্তি ও বিস্তারিত বর্ণনার কারনে:

Popular posts from this blog

আসেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাজাই

ইসলাম ও গণতন্ত্র

জামাতের ভোট: একবারে না পারিলে দাও শতবার